ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তি বনাম বিনিয়োগকারীর আস্থা

২০২৫ আগস্ট ১২ ১১:৩৭:০১
দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তি বনাম বিনিয়োগকারীর আস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজার গত দেড় দশক ধরে ভুলনীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার শিকার ছিল বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী। তিনি বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থায় বিগত ১৫ বছরে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তারা অনেকটা "গার্বেজ রেগুলেশন" চালু করেছিলেন। আইন-কানুন উপেক্ষা করে ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার ফলে বাজারে আস্থার সংকট তৈরি হয়।

‘বিনিয়োগকারীরাই শেয়ারবাজারের প্রাণ’—এই মন্তব্য করে শাকিল রিজভী বলেন,“বিভিন্ন সময়ে অনেক বিনিয়োগকারী বাজারে এসেছেন, কিন্তু আমরা তাদের ধরে রাখতে পারিনি। বাজারে দুর্বল, বন্ধ হয়ে যাওয়া বা পচা কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছি। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে এবং ২০০৯-১০ সালেও।”

তিনি অভিযোগ করেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ২ সিসি ধারার অপব্যবহার করে এমন কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করেছে এবং নানা রকম ওয়েভার দিয়ে বাজারকে অস্থির করে তোলে। এর ফলে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থায় স্বেচ্ছাচারিতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় বাজারে বড় ধরনের কারসাজিরও অভিযোগ করেন তিনি। সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম গ্রেপ্তার হলেও, খায়রুল হোসেনসহ অন্য সদস্যরা এখনো দায়মুক্ত রয়েছেন—এমন প্রশ্নে রিজভী বলেন,“তাদের বিরুদ্ধেও সঠিক ও স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া উচিত।”

তিনি আরও বলেন,“বিএসইসির নিয়ম অনুযায়ী একজন ব্যক্তি দুই দফায় সর্বোচ্চ ছয় বছর চেয়ারম্যান থাকতে পারেন। অথচ খায়রুল হোসেন কীভাবে নয় বছর দায়িত্ব পালন করলেন? এটা অবশ্যই আইনের ব্যত্যয়। অনেকেই মনে করেন, তিনি হয়তো কারও ‘সুবিধা’ দিয়েছেন বলেই অতিরিক্ত তিন বছর পদে থাকতে পেরেছেন।”

শাকিল রিজভী মনে করেন, হাসিনা সরকারের আমলে ব্যাংকের সুদহার ৬-৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল রাজনৈতিকভাবে, যা আর্থিক খাতের জন্য ছিল আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

“ব্যাংকিং, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার এসে ৬-৯ সুদহার বাতিল করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়, যার প্রভাব এখন শেয়ারবাজারেও পড়ছে।”

তিনি জানান, বর্তমানে দেশের অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে—রেমিট্যান্স বাড়ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবস্থা উন্নত হচ্ছে, ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্কের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিও বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বর্তমানে শেয়ারবাজারে কারসাজি নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে তিনি সতর্ক করেন,“আবার যদি দুর্বল কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা হয় এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা দায়িত্বশীল না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আবার খারাপ হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন,“ভালো কোম্পানি ছাড়া শেয়ারবাজারে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। ব্যাংক থেকে সহজেই ঋণ পেয়ে যাওয়ার কারণে অনেক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে চায় না। অথচ দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য শেয়ারবাজারের কোনো বিকল্প নেই।”

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে