ঢাকা, শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

এইচএসসি পাস মানেই আন্তর্জাতিকভাবে সপ্তম শ্রেণির সমতুল্য

২০২৫ আগস্ট ০২ ১৫:৪০:৪৯
এইচএসসি পাস মানেই আন্তর্জাতিকভাবে সপ্তম শ্রেণির সমতুল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের গড় জ্ঞান ও দক্ষতা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী মাত্র সপ্তম শ্রেণির সমতুল্য।

বিশ্বব্যাংকের মতে, ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীর অন্তত ১১ বছরের সমমানের শিক্ষা অর্জন করার কথা থাকলেও বাংলাদেশে তা মাত্র ৬.৫ বছর। অর্থাৎ, ৪.৫ বছরের শেখার ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি শুধু সংখ্যায় নয়, বরং শিক্ষার গুণগত দুর্বলতার বড় প্রমাণ।

সমন্বিত আন্তর্জাতিক টেস্ট স্কোর অনুযায়ী, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা গড়পড়তা ৩৬৮ স্কোর করছে, যেখানে ৩০০ হলো 'ন্যূনতম অর্জন' এবং ৬২৫ স্কোরকে ধরা হয় 'উন্নত অর্জন'। এর মানে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী মৌলিক পাঠ, গণিত ও বিশ্লেষণ দক্ষতায় দুর্বল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এইচএসসি পাস শিক্ষার্থীদের বড় অংশই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হন। যারা ভর্তি হন, তারাও রচনামূলক প্রশ্ন বোঝেন না, গণিত ও প্রোগ্রামিংয়ে ঘাটতি প্রকট। কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে:

মুখস্থনির্ভর শিক্ষা

পরীক্ষাকেন্দ্রিক মূল্যায়ন

বিশ্লেষণধর্মী পাঠদানের অভাব

প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মনিনুর রশিদ বলেন, “ভর্তি পরীক্ষায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করে। কারণ, শিখন ঘাটতি নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়ে আসে তারা।”

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম আমানুল্লাহ বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষকরা মোটিভেটেড নন। তারা নানা কাজের চাপে পাঠদানে মনোযোগ দিতে পারেন না। শিক্ষার্থীরা ইংরেজি, গণিতে দুর্বল। এর কারণ শিক্ষকরা কীভাবে শেখাতে হবে তা জানেন না।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, “শিক্ষার্থীরা জিপিএ-৫ পেলেও মৌলিক জ্ঞান নেই। গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে। ভালো শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার্থীরা শিখবে কীভাবে?”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মানঘাটতির প্রভাব পড়ছে জাতীয় উৎপাদনশীলতায়। শিক্ষিত কিন্তু অদক্ষ জনবল আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।

বিশ্বব্যাংকের মানবসম্পদ সূচকে বাংলাদেশ ২০১৮ সালে ১৫৭ দেশের মধ্যে ১০৬তম অবস্থানে ছিল। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে শিশুদের উৎপাদনশীলতা হবে মাত্র ৪৮%।

বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ:

মুখস্থ নির্ভরতার পরিবর্তে বিশ্লেষণমূলক শিক্ষা

শিক্ষকের প্রশিক্ষণ ও বেতন বৃদ্ধি

পাঠ্যবইয়ের বাইরের বাস্তবভিত্তিক পাঠদান

জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষার মান মূল্যায়ন চালু

গ্রামীণ শিক্ষায় বিনিয়োগ ও শিক্ষক আকৃষ্টকরণ

শিক্ষার মান শুধু পাসের হার নয়, বরং শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। এখনই এই সংকট সমাধানে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে