ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

১৭ বছর পর বিএনপি ছেড়ে জামায়াতে যাচ্ছেন বাবর!

২০২৫ জুলাই ৩০ ১৫:২৬:৩৯
১৭ বছর পর বিএনপি ছেড়ে জামায়াতে যাচ্ছেন বাবর!

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ ১৭ বছরের কারাবাস শেষে এ বছরের শুরুতে মুক্তি পান সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তার মুক্তিতে নেত্রকোনাসহ দেশজুড়ে তৈরি হয়েছিল ব্যাপক আলোড়ন। কারাগারের গেটে হাজার হাজার মানুষের আবেগঘন সংবর্ধনা প্রমাণ করেছিল, সাধারণ মানুষ তাকে ভোলেনি। কিন্তু মুক্তির পর কিছুদিন গণমাধ্যমে সক্রিয় থাকলেও হঠাৎ করেই নীরব হয়ে যান তিনি। রাজপথ, দলের বৈঠক কিংবা টক শো—কোথাও নেই বাবরের উপস্থিতি। তার এই আকস্মিক অন্তরাল জন্ম দিয়েছে নানা গুঞ্জন ও রাজনৈতিক সমীকরণের।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে, বাবর কি ধীরে ধীরে বিএনপি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন? দলের ভেতরে তার অবস্থান নিয়ে কানাঘুষা এখন আর গোপন নেই। শীর্ষ নেতৃত্ব তাকে আবার সামনে আনতে আগ্রহী নয় বলে মনে করা হচ্ছে। নেত্রকোনা-৪ আসনে তার একসময়ের আধিপত্য এখন বিতর্কের মুখে। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন কি না, তা নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে সংশয়।

এই টানাপোড়েনের মাঝেই নতুন গুঞ্জন ডালপালা মেলেছে—বিএনপি ছেড়ে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিচ্ছেন লুৎফুজ্জামান বাবর?

এই গুঞ্জনের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে সামনে এসেছে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও। সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের মায়ের মৃত্যুতে শোক জানাতে গিয়ে বাবর ও জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের দেখা হয়। সেখানে তাদের আন্তরিক আলিঙ্গন ও বন্ধুত্বপূর্ণ কথোপকথনের দৃশ্যটি নতুন রাজনৈতিক বার্তার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।

বিএনপির সঙ্গে বাবরের দূরত্ব

বাবরের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নতুন নয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় কারাগারে থাকা অবস্থায় দল তাকে মনোনয়ন না দিলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন। এর জেরে ভোটের মাত্র তিন দিন আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হলেও বাবর আর কখনো দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে ফেরেননি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টুর সঙ্গে তার তুলনা করছেন। পিন্টু কারাগারে থেকেও দলের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, কিন্তু প্রায় সমান জনপ্রিয় এবং একই ধরনের মামলায় অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও বাবর কেন দলে এমন অবহেলিত, সেই প্রশ্ন উঠছে।

বিতর্কিত অতীত ও ভারত ফ্যাক্টর

বাবরের অতীত বেশ ঘটনাবহুল। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন। স্পষ্টভাষী এবং ভারতবিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে তিনি বারবার আলোচনায় এসেছেন।

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা: ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামে আটক হওয়া দশ ট্রাক অস্ত্রের চালানের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তার নাম উঠে আসে। অভিযোগ, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফাসহ অন্যান্য গোষ্ঠীর জন্য এই অস্ত্র আনা হচ্ছিল, যা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে চরম উত্তেজনা তৈরি করে।

এস এম কিবরিয়া হত্যাকাণ্ড: ২০০৫ সালে হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া নিহত হন। সেই মামলাতেও বাবরের নাম আসে।

অনেক বিশ্লেষকের মতে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একাই অস্থিতিশীলতা তৈরির সক্ষমতা রাখতেন বাবর। তার সীমান্ত নিরাপত্তা কৌশল এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে তার ভূমিকা ছিল ভারতের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ।

বাবরের ঘনিষ্ঠরা তার অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকে দূরে থাকার কথা বললেও, জামায়াত নেতার সঙ্গে তার সাম্প্রতিক সাক্ষাৎ নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। দেশের রাজনীতিতে যখন ভারতের প্রভাব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে, তখন বাবরের মতো ভারতবিরোধী হিসেবে পরিচিত নেতার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে।

বিএনপি কি ভারতের প্রভাব মোকাবেলায় সচেতন হতে চায়? যদি তাই হয়, তবে বাবরের মতো নেতৃত্বকে অবহেলা করা একটি বড় রাজনৈতিক ভুল হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

শেষ পর্যন্ত লুৎফুজ্জামান বাবর কি নতুন রূপে রাজনীতিতে ফিরবেন, নাকি ইতিহাসের পাতায় কেবল সেই নেতা হিসেবেই থেকে যাবেন, যাকে একসময় ভারত "ভূতের চেয়েও বেশি ভয় পেত"? উত্তর দেবে সময়ই।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে