ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

ঐকমত্যের খসড়া সনদ নিয়ে উত্তাল রাজনীতি

২০২৫ জুলাই ৩১ ০৮:৩৮:৩৭
ঐকমত্যের খসড়া সনদ নিয়ে উত্তাল রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে বড় দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী সরকার গঠনের পর দুই বছরের মধ্যে সংস্কার বাস্তবায়নের বিষয়টি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মেনে নিলেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে—নির্বাচনের আগেই এসব সংস্কারের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হলে তারা এ সনদে স্বাক্ষর করবে না।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ২২তম দিনের আলোচনায় এসব বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ পায়। আলোচনায় মূল বিষয় ছিল সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, ন্যায়পাল নিয়োগ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও নির্বাচন পদ্ধতি, সংসদের উচ্চকক্ষের গঠন, নাগরিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের মূলনীতি।

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, বৃহস্পতিবার (আজ) গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তুলে দেওয়া হবে। তার মতে, ইতোমধ্যে ১৪টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং বাকি বিষয়গুলোতেও সমঝোতা অর্জনের চেষ্টা চলছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই সনদ একটি ঐতিহাসিক অঙ্গীকারনামা, যা জাতিকে নতুন দিশা দেখাবে। তিনি জানান, ৮২৬টি সংস্কার সুপারিশের মধ্যে বিএনপি ৬৫৯টিতে একমত হয়েছে, মাত্র ৫১টিতে একমত হয়নি এবং ১১৬টিতে দ্বিমত পোষণ করেছে। তার মতে, এই সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নয়, এটি জাতির সঙ্গে একটি ঐক্যমূলক প্রতিশ্রুতি।

জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সংস্কারের আইনি ভিত্তি না থাকলে তা বাস্তবায়নযোগ্য হবে না। জনগণের কাছে এর কোনো মূল্য থাকবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি বর্তমান সরকার না থেকে পরবর্তী সরকার এই সংস্কার বাস্তবায়ন করে, তাহলে এতদিনের আলোচনা কি কেবল পরামর্শেই সীমাবদ্ধ থাকবে?

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অতীতেও আইনি জটিলতা কাটিয়ে সমাধান হয়েছে এবং এবারও আইনগত ভিত্তি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এজন্য তিনি আইনজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেন। তার মতে, আইনি ভিত্তি না থাকলে এই সনদ কেবল একটি প্রতীকী দলিল হয়ে থাকবে, যা জামায়াত স্বাক্ষর করবে না।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে আইনি ভিত্তিসম্পন্ন জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি জানান, সনদ ও ঘোষণাপত্রকে অনেকে এক মনে করলেও এগুলো আলাদা। সনদে থাকবে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার, আর ঘোষণাপত্রে থাকবে জুলাই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হওয়া বিষয়গুলোকে সাংবিধানিক ও আইনগত ভিত্তি না দিলে সেগুলো কেবল একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবেই থেকে যাবে। এনসিপি তাই দুই বছরের বাস্তবায়ন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তার মতে, “পরবর্তী সরকার যদি স্বীকৃতি না দেয়”—এ ধরনের যুক্তি ফাঁকিবাজি ছাড়া আর কিছু নয়।

আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া। সেদিনের বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়, যার মধ্যে গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ পার্টি অন্যতম।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে