ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর যেভাবে পেয়েছিলেন সাবেক আইজিপি

২০২৫ জুলাই ৩১ ০৯:০৫:৩৬
হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর যেভাবে পেয়েছিলেন সাবেক আইজিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন একটি চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক উত্তেজনা ও ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে নেওয়া পদক্ষেপের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন। এতে উঠে এসেছে গণভবনের একের পর এক বৈঠক, আন্দোলন দমনে ব্যর্থতা এবং শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছাড়ার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর কথা।

চলতি বছরের ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দেওয়া পাঁচ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে চৌধুরী মামুন ২০১৮ সালের নির্বাচনে অনিয়ম, গুম, খুন এবং জুলাই মাসের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ করেছেন।

জবানবন্দি অনুযায়ী, ৪ আগস্ট সকাল ১১টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একটি জরুরি বৈঠক হয়। সেখানে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের মূল বিষয় ছিল চলমান ছাত্র-জনতার আন্দোলন কীভাবে দমন করা যায়। মামুন জানান, “গোয়েন্দা প্রতিবেদন জানায় আন্দোলন গুরুতর পর্যায়ে চলে গেছে, তাই তা দমন করা প্রয়োজন। তবে সরকার পতন বা সংস্কারের কোনো আলোচনা করেনি। সরকার তার দুর্বলতা শুনতে রাজি ছিল না।” পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাওয়ায় বৈঠকটি মুলতবি করা হয়।

সেদিন রাত ১০টায় প্রধানমন্ত্রী আবারও গণভবনে বৈঠক ডাকে। ওই বৈঠকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তিন বাহিনীর প্রধান, র‌্যাব ডিজি ও জেনারেল মুজিব উপস্থিত ছিলেন। মামুন বলেন, “৫ আগস্টের আন্দোলন ও গণজমায়েত দমন নিয়ে আলোচনা হয়। ফোর্স মোতায়েনের বিস্তারিত পরিকল্পনা নেওয়া হয়।” এরপর সেনাবাহিনীর অপারেশন কন্ট্রোল রুমে গিয়েও তারা এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকা শহর ও প্রবেশমুখে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে এবং পুলিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করবে।

চৌধুরী মামুনের বক্তব্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট সকাল ১০টা পর্যন্ত পুলিশ ঢাকায় শক্ত অবস্থানে ছিল। কিন্তু উত্তরা-যাত্রাবাড়ী এলাকায় লক্ষ লক্ষ মানুষ জমায়েত হয় এবং বেলা ১১টার দিকে উত্তরা থেকে ঢাকার ভিতরে জনস্রোত প্রবাহিত হতে শুরু করে। তিনি জানান, “সেনাবাহিনী বাধা দেয়নি এবং মাঠ পর্যায়ের অফিসার ও ফোর্স আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। ফলে গণভবনমুখী জনতা দমন ও আটকানো সম্ভব হয়নি।”

দুপুর ১২:৩০ থেকে ১টার মধ্যে তিনি বুঝতে পারেন যে সরকার পতনের পথে। মামুন বলেন, “আমি এসএসবির মাধ্যমে জানতে পারি প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা ছাড়বেন। ভারত যাবেন কি না জানি না, সেনাবাহিনী কিছু জানায়নি।”

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা হয়। মামুন জানান, “বিকেলে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে হেলিকপ্টার আসবে জানতে পেরে আমি তেজগাঁও বিমানবন্দর যাই এবং সেখান থেকে সেনাবাহিনীর অফিসার্স মেসে আশ্রয় নিয়েছি।”

জবানবন্দির শেষ অংশে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন তার দায়িত্ব সম্পর্কে অনুতাপ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমন করতে গিয়ে সরকারের নির্দেশনায় ও পুলিশের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ, নির্বিচারে নির্যাতন, গুলি চালানো, গ্রেপ্তার ও অসংখ্য মানুষকে আহত-হত্যার জন্য আমি সাবেক পুলিশ প্রধান হিসেবে লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।”

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে