ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

নেত্রকোনায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়

২০২৫ জুলাই ৩১ ০৯:৩১:২৬
নেত্রকোনায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়

নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোণা জেলা হাওর, পাহাড় ও সমতলের মিশ্র অনন্য সৌন্দর্যের শোভায় ভরপুর। এখানকার ভোটাররা সরাসরি কোনো এক দলের প্রতি অনুগত নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে বিচিত্র ধারার। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দীর্ঘদিনের প্রতিযোগিতার মাঝেই ইসলামপন্থিরা নীরবে স্থান দখল করছে—যদিও কোনো ইসলামি দল এখনও জাতীয় সংসদে আসনে বিজয়ী হয়নি।

জেলার ১০টি উপজেলা নিয়ে পাঁচটি সংসদীয় আসন রয়েছে। ৩য় সংসদ নির্বাচনী প্রচারণার প্রস্তুতি তুঙ্গে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বাড়ি বাড়ি ভোটারদের সাথে যোগাযোগ করছেন—বিশেষত বিএনপির কেন্দ্রীয় ও হেভিওয়েট নেতা-কর্মীরা। এছাড়া জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলও মাঠে সক্রিয় হলেও তাদের স্থানীয় সংগঠন এখনও সশক্ত নয়।

নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা)

এই গারো–পাহাড়ি অঞ্চলে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পাল্টা রাজত্ব করেছে। এবার বিএনপি হেভিওয়েট নেতারাও মনোনয়ন প্রত্যাশী; তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কর আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. হামিদুর রহমান রাশেদ এবং ছাত্রদলের প্রাক্তন নেতা এজমুল হোসেন পাইলট। তারা স্থানীয় কর্মসূচিতে ভোটারদের সমর্থন অর্জনে কাজ করছেন।

নেত্রকোনা-২ (সদর ও বারহাট্টা)

এ আসনে বিএনপির শক্ত ভিত রয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আশরাফ উদ্দিন খান, বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সহ সম্পাদক ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব এটিএম আবদুল বারী ড্যানি, অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল হক, ডা. আরিফা জেসমিন নাহীন ও ইঞ্জিনিয়ার খোরশেদ আলম মিয়া রয়েছেন। ডা. আনোয়ারুল মন্তব্য করেন, “এখানে ধানের শীষের জোয়ার বইছে—খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি ভরসা রয়েছে।”

নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া–আটপাড়া)

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী, সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভুইয়া দুলাল, ব্যবসায়ী সৈয়দ আলমগীর খসরু, যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা মেজর সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক ও প্রাক্তন ক্রীড়া সম্পাদক রায়হান আমিন তালুকদার রনি। তারা সক্রিয় প্রচারণা চালাচ্ছেন।

নেত্রকোনা-৪ (মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী)

হেভিওয়েট নেতা হিসেবে এখানে বেশি ভরসা রয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ওপর, যিনি বার বার এই আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতে রয়েছেন সাবেক কর কমিশনার কাজী ইমদাদুল হক ও বিএনপি নেতা ফারুখ আহমেদ। বাবরের সমর্থনে ভর করে কামিয়ে নিচ্ছেন ভোটারদের আস্থা।

নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা)

এখানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রভাব প্রায় সমপরিমাণ—বর্তমানে বিএনপির অবস্থান দৃঢ়। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা—সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের তালুকদার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ খান, বাবুল আলম তালুকদার ও ডা. মুহাম্মদ আলীর ছেলে মাহাবুবুল আলম রানা—বিভিন্ন কর্মসূচিতে মূল ভূমিকা পালন করছেন।

ভোটাররা আশা করেন, এবার কোনো দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ বা চাঁদাবাজ বিপদজনক প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন না। বরং সৎ, শিক্ষিত ও এলাকার উন্নয়নে আগ্রহী প্রার্থী প্রত্যাশিত।

শরিফুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি শিক্ষিত আর সৎ প্রার্থী ছাড়া ভোট দিব না।’ হোসনে আরা যুক্ত হয়, ‘নারীবান্ধব প্রার্থী হলে যে দলেরই হন, তারই ভোট দেব।’ জসিম উদ্দিন শ্রেণীবদ্ধ করেন, ‘সততার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা থাকা প্রার্থীই জয়ী হবে।’

নেত্রকোনায় এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ও হেভিওয়েট নেতারা মনোনয়ন প্রত্যাশা করলেও বেশিরভাগ আসনেই স্থানীয় স্তরের নেতাদের প্রতিযোগিতা তীব্র। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শক্তি হিসেবে এনসিপি, জামায়াত, খেলাফত, গণঅধিকার পরিষদ সক্রিয় হলেও রাজনীতির মূল দৌড়ে এখনও জায়গা পায়নি। ভোটারদের চাহিদা—সততা, নির্ভরযোগ্যতা ও উন্নয়ন-মনস্ক প্রার্থী।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে