ঢাকা, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

বিএনপি নেতা তানভীর রবিনের বর্ণনায় সেই ভয়াল দিনগুলো

২০২৫ জুলাই ২৬ ১১:২৩:১৩
বিএনপি নেতা তানভীর রবিনের বর্ণনায় সেই ভয়াল দিনগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন তুলে ধরেছেন তাদের প্রতিরোধ, কৌশল এবং নেতা-কর্মীদের উপর চালানো সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র।

তানভীর আহমেদ রবিনের মতে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দেশের ইতিহাসে একটি অনন্য অধ্যায়। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলন পরবর্তীতে সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের জমে থাকা অসন্তোষের বিস্ফোরণে রূপ নেয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) শুরু থেকেই এই আন্দোলনের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করে।

আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরও সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯ জুলাই জাতীয় ঐক্য সমাবেশের মাধ্যমে তারা মাঠে নামে। তানভীর আহমেদ রবিন জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপিকে আন্দোলনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, কারণ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো তাদের ইউনিটের অধীনে ছিল।

আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হবে, এটা আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন তারা। তাই বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হয়। রবিন জানান, "প্রায় দেড় বছর আগে থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। প্রতিটি থানায় ৭-৮ জন করে প্রশিক্ষিত যোগাযোগ কর্মী তৈরি করা হয়। তাদের হাতে সিমবিহীন মোবাইল ফোন, বেনামী সিম ও রাউটার তুলে দেওয়া হয়।" উদ্দেশ্য ছিল, যেকোনো পরিস্থিতিতে যাতে কেন্দ্র এবং তৃণমূলের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়।

তানভীর আহমেদ রবিন বলেন, "২০ জুলাই যখন কারফিউ জারি হয়, তখন আমরা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর নেতৃত্বে রামপুরায় কারফিউ ভেঙে বিশাল মিছিল বের করি।" তিনি আরও জানান, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া ও শ্যামপুর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে তাদের কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এসময় স্নাইপার দিয়ে গুলি চালানোর মতো ঘটনাও ঘটে বলে তিনি দাবি করেন।

রবিনের মতে, যাত্রাবাড়ী এলাকা ছিল আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি। ৫ আগস্ট, যখন শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালান, তখন যাত্রাবাড়ীতেই সবচেয়ে বড় এবং নির্মম দমন-পীড়ন চালানো হয়। তিনি বলেন, "সরকারি বাহিনী জানতো এই এলাকায় আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি, তাই রক্ত দিয়ে, ভয় দেখিয়ে, গুলি দিয়ে প্রতিরোধ থামিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।"

আন্দোলনের এক পর্যায়ে এটি আর কোনো দলীয় কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতে অংশ নেয়। রবিন বলেন, "এলাকার সাধারণ মানুষ নিজেদের ঘরের দরজা খুলে দিয়েছিলেন আমাদের জন্য। তারা আমাদের চিনতেন না, তবুও আমাদের আপন করে নিয়েছেন।" বিভিন্ন মসজিদের মাইক থেকেও আন্দোলনের বার্তা প্রচার করা হয়, যা ছিল এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই আন্দোলনকে গণজাগরণে রূপ দেয়।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে