ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

জমি বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা পরিশোধে নামছে ফারইস্ট লাইফ

২০২৫ জুলাই ২৫ ১২:১৩:৫০
জমি বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা পরিশোধে নামছে ফারইস্ট লাইফ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তখন থেকে কোম্পানিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বীমা ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পায়। কিন্তু বর্তমানে সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের দাবীকৃত বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানিটি তাদের গুলশান, কাকরাইল ও ফেনীর তিনটি সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এই সম্পত্তি বিক্রির পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে, যা ফারইস্ট ইসলামী লাইফকে বকেয়া গ্রাহক দাবি নিষ্পত্তিতে সহায়তা করবে। এর আগে আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম আসলাম আলম জোর দিয়েছিলেন যে, বীমা কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই সময়মতো দাবি নিষ্পত্তি করতে হবে, প্রয়োজনে তাদের সম্পদ বিক্রি করেও।

আইডিআরএ'র তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফের মোট বকেয়া দাবির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোম্পানিটি মাত্র ৫৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে পেরেছে, যার ফলে ৯৮ শতাংশ দাবি এখনো অমীমাংসিত রয়েছে।

কোম্পানিটি সম্প্রতি জমি বিক্রির একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তবে তালিকাভুক্তি বিধিমালা অনুযায়ী এটি স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে প্রকাশ না করায় এটি একটি নন-কমপ্লায়েন্স। কোম্পানির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, জীবন বীমা কোম্পানিটি গুলশান-২ এ একটি ৩৩ ডেসিমেল একতলা ভবনসহ জমি, কাকরাইলে ৩২ ডেসিমেল চারতলা ভবনসহ জমি এবং ফেনীতে ১৫ ডেসিমেল দ্বিতল ভবনসহ জমি বিক্রি করবে। কোম্পানি আগ্রহী ক্রেতাদের ৭ আগস্টের মধ্যে প্রস্তাব জমা দিতে অনুরোধ করেছে। তবে বিজ্ঞপ্তিতে কোম্পানিটি জমির মূল্য উল্লেখ করেনি।

কোম্পানির আর্থিক অবস্থার এই চরম অবনতির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২১ সালের এপ্রিলে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একটি বিশেষ অডিট পরিচালনার জন্য সিরাজ খান বাসাক অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্মকে নিয়োগ করে। এই অডিট শুরু করা হয়েছিল বীমাকারী গ্রাহকদের দাবি নিষ্পত্তি করতে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পলিসির অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে।

অডিট রিপোর্টে প্রকাশ পায়, কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীদের দ্বারা প্রায় ২ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়াও, ৪৩২ কোটি টাকার হিসাবের অনিয়ম উদঘাটিত হয়। এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও এম এ খালেক, সাবেক সিইও হেমায়েত উল্লাহ এবং আরও কয়েকজন সাবেক পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। মূলত দুটি পদ্ধতিতে তহবিল আত্মসাৎ করা হয়েছিল-- অস্বাভাবিক দামে জমি ক্রয় এবং কোম্পানির মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রসিদ বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ।

এর প্রতিক্রিয়ায় বিএসইসি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কোম্পানির বোর্ড ভেঙে দেয় এবং সিইও হেমায়েত উল্লাহকে বরখাস্ত করে। পরবর্তীতে ২০২২ সালে শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে বিএসইসি বেক্সিমকো গ্রুপের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের ফারইস্ট ইসলামী লাইফের বোর্ডে যোগদানের অনুমতি দেয়। তাদের নিয়োগের আগে বেক্সিমকো-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কোম্পানিতে শেয়ার কিনেছিল।

তবে সরকার পরিবর্তনের পর বেক্সিমকো-সংশ্লিষ্ট বোর্ড সদস্যরা এবং বিএসইসি-নিয়োগকৃত স্বতন্ত্র পরিচালক উভয়েই পদত্যাগ করেন। তাদের প্রস্থানের পর ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে কোম্পানি থেকে বিতাড়িত সাবেক স্পন্সররা ফারইস্ট ইসলামী লাইফে ফিরে আসেন এবং বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে