ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

মুনাফায় মনোযোগ, বিনিয়োগে ঠনঠন: বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর নতুন প্রবণতা

২০২৫ জুলাই ২৫ ২০:২৯:০০
মুনাফায় মনোযোগ, বিনিয়োগে ঠনঠন: বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর নতুন প্রবণতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি সম্প্রতি তাদের নিট মুনাফার চেয়েও বেশি ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, যা বাজার বিশ্লেষকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। এই অপ্রত্যাশিত প্রবণতা কেবল পুনর্বিনিয়োগের অনাগ্রহই নয়, বরং দেশে তাদের দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম সীমিত করার একটি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত বহন করছে বলে তারা মনে করছেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর তথ্য অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৩টি বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে ৯টিই তাদের ঘোষিত ডিভিডেন্ড মুনাফার তুলনায় বেশি। সম্মিলিতভাবে তাদের নিট মুনাফা ছিল প্রায় ৮ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। অথচ তারা ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে প্রায় ৯ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা – অর্থাৎ নিট মুনাফার চেয়ে ১ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা বেশি।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, মুনাফার অতিরিক্ত এই ডিভিডেন্ড বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে মূল কোম্পানিগুলো দেশে পুনর্বিনিয়োগের আগ্রহ হারাচ্ছে। বিশেষ করে, গত কয়েক বছরে ডলার সংকটের কারণে যে ডিভিডেন্ডতারা বিদেশে নিতে পারেনি, এখন সেই অর্থ একবারে স্থানান্তর করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

কেন এই বিনিয়োগ বিমুখতা?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এখনো যথেষ্ট বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাচ্ছে না। এ বিষয়ে আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, "নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত তাদের আন্তর্জাতিক নীতির অংশ হতে পারে। কিন্তু এটাও আমাদের ব্যর্থতা যে, আমরা তাদের বিনিয়োগে আকর্ষণ করতে পারছি না।"

কারা কত ডিভিডেন্ড দিয়েছে?

গ্রামীণফোন সর্বোচ্চ ডিভিডেন্ডদিয়েছে – ৩ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার নিট মুনাফার বিপরীতে তারা ৪ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকার ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ম্যারিকো বাংলাদেশ দিয়েছে ৬১৯ কোটি টাকা এবং লাফার্জহোলসিম দিয়েছে ১১৩ কোটি টাকা। এছাড়া, রবি আজিয়াটা, রেকিট বেনকিজার, সিঙ্গার বাংলাদেশ, আরএকে সিরামিকস, লিন্ডে বিডি ও ইউনিলিভারসহ আরও কয়েকটি কোম্পানিও তাদের মুনাফার তুলনায় বেশি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে, বিএটিবিসি, বার্জার পেইন্টস, বাটা শু ও হাইডেলবার্গ সিমেন্ট মুনাফার তুলনায় কিছুটা কম ডিভিডেন্ড দিলেও সামগ্রিক প্রবণতা একই রকম।

মুনাফার চেয়ে বেশি ডিভিডেন্ড ঘোষণার বিষয়ে কোম্পানিগুলোর বক্তব্য হলো, তারা প্রচলিত নীতিমালার আওতায় থেকেই ডিভিডেন্ড দিয়েছে। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোনো কোম্পানি কিভাবে মুনাফা ব্যবহার করবে তা নির্ধারণ করা কোম্পানিগুলোর এখতিয়ার; নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না।

যদিও কোম্পানিগুলো নিয়ম মেনে চলার কথা বলছে, তথাপি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে – বাংলাদেশে যদি যথেষ্ট প্রবৃদ্ধির সুযোগ থাকে, তবে কেন এই কোম্পানিগুলো নতুন করে বিনিয়োগ করছে না? তারা কি বাংলাদেশকে কেবল লাভ তুলে নেওয়ার ক্ষেত্র হিসেবেই দেখছে?

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই প্রবণতা চলতে থাকলে তা দেশের শেয়ারবাজার এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে চাপ তৈরি করতে পারে। এই বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের আশু করণীয় নির্ধারণ করা জরুরী।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে