ঢাকা, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
Sharenews24

সুইস ব্যাংকে ৮ বাংলাদেশি পরিবারের গোপন টাকার খবর ফাঁস

২০২৫ মার্চ ০৮ ১৫:১৪:৫০
সুইস ব্যাংকে ৮ বাংলাদেশি পরিবারের গোপন টাকার খবর ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বের অন্যতম সুরক্ষিত ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ক্রেডিট সুইস ব্যাংক, যেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রাখার তথ্য সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে। ২০২২ সালে প্রকাশিত সুইস সিক্রেটস অনুসন্ধানে জানা যায়, সুইস ব্যাংকে মোট ৮টি বাংলাদেশি পরিবারের ৩৬০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে। এই তথ্য বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে উঠে আসে, যেখানে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, এবং উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা সুইস ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা জমা রেখেছেন।

এই অনুসন্ধান অনুসারে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি আট পরিবারের অন্তত ৬৮টি একাউন্ট রয়েছে, যার মধ্যে মোট ২৬১.৯ মিলিয়ন ডলার (২৬.১৯ কোটি) সুইস ফ্রাঁ বিভিন্ন সময়ে গচ্ছিত ছিল। ২০১২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বেশ কিছু একাউন্ট খোলা হয়েছে, আর এর মধ্যে কিছু একাউন্ট পরবর্তীতে বন্ধও করা হয়। এ ছাড়া, ব্যাংক একাউন্টগুলোতে নিয়মিত টাকা জমা ও উত্তোলনের লেনদেন দেখা গেছে।

সামদানি পরিবার:

এই পরিবারের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে। রাজীব সামদানির মালিকানাধীন গোল্ডেন হারভেস্ট গ্রুপ, যেটি মূল্যবান শিল্পকর্ম সরবরাহকারী হিসেবে বিখ্যাত, তাদেরও বিপুল পরিমাণ অর্থ সুইস ব্যাংকে রয়েছে। রাজীব সামদানি, তার স্ত্রী নাদিয়া সামদানি, ভাই মেহেদী সামদানি, এবং গোল্ডেন হারভেস্টের পরিচালক মহিয়াস সামাদ চৌধুরী—সকলেই সুইস ব্যাংকে বিশাল পরিমাণ টাকা জমা রেখেছেন, যার পরিমাণ ৭৫৭ কোটি ৯২ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫ টাকা।

আজিজ মোহাম্মদ ভাই পরিবার:

আরেকটি বিশাল নাম আজিজ মোহাম্মদ ভাই, যার পরিবারের সদস্যরা সুইস ব্যাংকে ১২টি একাউন্টে মোট ৭২০ কোটি ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৫৩৫ টাকা জমা রেখেছেন। তার ছোট বোন নূরজাহান হুদা এবং বোন জামাই হুদা এল ইদ্রোস'র ব্যাংক একাউন্টেও বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রয়েছে।

মিরালী গ্রুপ:

এছাড়া, মিরালী গ্রুপ এর সদস্যদেরও সুইস ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে, যার মধ্যে মুবারক আলী, সোকিনা নাসরুল্লাহ মিরালী, এবং সামাদ নাসরুল্লাহ মিরালী এই ব্যাংক একাউন্টে প্রচুর পরিমাণ সুইস ফ্রাঁ জমা রেখেছেন। তাদের মোট জমা পরিমাণ প্রায় ৫৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৯৮ হাজার ১০০ টাকা।

হিসামুদ্দিন সালেহ পরিবার:

হিসামুদ্দিন সালেহ এবং তার পরিবারের সদস্যদেরও সুইস ব্যাংকে ১৮টি একাউন্ট রয়েছে, যেখানে মোট ৬৮০ কোটি ১৪ লাখ ১১ হাজার ৯১৫ টাকা গচ্ছিত রয়েছে। সালেহ পরিবারের ব্যাংক একাউন্টে বেশ কিছু কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা তাদের আর্থিক শক্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পরিবার:

এছাড়াও, রহিমা ফুড কর্পোরেশন, সিটি সুগার গ্রুপ, সানমার প্রপার্টিজ, সিলেটের সাবেক এমপি পরিবারের সদস্যরা এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্যদের সুইস ব্যাংকে একাধিক একাউন্ট রয়েছে, যার মধ্যে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ লক্ষণীয়।

উল্লেখযোগ্য যে, সুইস ব্যাংক ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য হলো গ্রাহকদের গোপনীয়তা রক্ষা করা, যা প্রায় ৩০০ বছর ধরে চলে আসছে। এর ফলে, সারাবিশ্বের অনেক ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, এবং বিত্তবানরা তাদের টাকা সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখে, কারণ এখানকার গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা করা হয়।

এভাবে, সুইস ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রাখা বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক পরিবারের জন্য অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো একাউন্টের বিপুল পরিমাণ অর্থ, বিশেষত যারা এই অর্থ জমা রেখেছেন, তা এখন বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, সুইস ব্যাংকের এই গোপনীয়তার কারণে এসব লেনদেন পুরোপুরি বৈধ, এবং বিশ্বব্যাপী এই ধরনের আর্থিক ব্যবস্থা জনপ্রিয়।

এখন সরকারের উচিত, এসব বিষয়ে তদন্ত করা এবং যারা এই অর্থ বৈধভাবে উপার্জন করেননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। তবে, এটি একটি বড় প্রশ্ন যে, এসব টাকা কোথা থেকে আসল, এবং কেন এসব ব্যক্তিরা দেশের বাইরে তাদের অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন!

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে