ঢাকা, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
Sharenews24

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জনে নতুন চাপে শেয়ারবাজার

২০২৫ মে ২৪ ১৫:০৬:২০
প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জনে নতুন চাপে শেয়ারবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জনের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে অনিশ্চয়তা ও আস্থার ঘাটতি। যার কারণে শেয়ারবাজারে দেখা দিয়েছে ফের বড় ধরনের পতন।

আজ শনিবার (২৪ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের শুরুর দিকে কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেলেও লেনদেনের দেড় ঘন্টার মাথায় তা রূপ নেয় ধারাবাহিক পতনে। এতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। লেনদেনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ৩৮ পয়েন্টের বেশি কমে যায়। আগেরদিন কমেছিল ১৬ পয়েন্টের বেশি।

গত বছর অন্তবর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের প্রাক্কালে বাজারে এক ধরনের ইতিবাচক আবহ তৈরি হয়। ডিএসইর প্রধান সূচকে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে যুক্ত হয় ১২০০ পয়েন্টের বেশি। এ সময় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশা তৈরি হয়েছিল, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নতুন নেতৃত্বের কারণে শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কেটে যাবে।

কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে একটি নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে। তখন থেকেই বাজারে চাঙ্গাভাব থেমে যায় এবং বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার সঙ্গে কমিশনের দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে।

নতুন কমিশনের নেতৃত্বে বাজারে তেমন কোনো উদ্দীপনামূলক নীতি গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের। বহুদিন ধরে একই ধরনের নির্দেশনা ও পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে বাজারে কার্যত কোনো গতি তৈরি হয়নি। বরং বাজারে নেতিবাচক আবহ জোরদার হয়।

একাধিক শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারী জানান, নতুন কমিশন বাজারের বাস্তব অবস্থা ও অংশীজনদের সঙ্গে সার্বিক সংলাপ না করে শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রক ভূমিকায় থেকে কাজ করছে। এতে করে আস্থাহীনতা বাড়ছে।

বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজার লেনদেন ও সূচক— উভয় ক্ষেত্রেই ৫ বছর আগের অবস্থানে চলে গেছে। প্রতিদিনের গড় লেনদেন ২৫০-৪০০ কোটি টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, যা ২০২০ সালের করোনা-পরবর্তী সংকটকালেও দেখা যায়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে তলানিতে লেনদেন নেমে আসার মূল কারণ হলো নগদ অর্থের সংকট, মার্জিন ঋণে নিয়ন্ত্রণ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনীহা এবং বাজারে অকার্যকর আইপিও প্রক্রিয়া।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের একটাই দাবি— বাজারে স্বচ্ছ, গতিশীল ও বাস্তবভিত্তিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হোক।

তাদের মতে, বাজারে পুনরায় আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ ও নিয়মিত মতবিনিময় সভা আয়োজন, বাজারবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বিদ্যমান কঠোর নির্দেশনার পুনর্বিবেচনা, বাজারে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়, উন্নত মানের কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে উৎসাহ প্রদান এবং দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ নেতৃত্ব নিশ্চিত করা জরুরি।

একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী বলেন, “আমরা চিরকালই বাজারের ভুক্তভোগী। সরকার পরিবর্তন হয়, কমিশন আসে-যায়—কিন্তু আমাদের পুঁজি পড়ে থাকে ঝুঁকির মুখে। আমরা চাই সঠিক নেতৃত্ব এবং টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা।”

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ একেবারে অমূলক নয়। তারা চায়— শুধু নিয়ন্ত্রণ নয়, সহায়তা-নির্ভর একটি কমিশন, যা বাজারের বাস্তবতা বুঝে পদক্ষেপ নিতে সক্ষম।

শেয়ারবাজার দেশের অর্থনীতির আয়না—এ কথা বারবার বলা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারকে চাঙ্গা করতে হলে বিনিয়োগকারীদের কথা শুনতে হবে এবং স্থায়ী আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে—এটাই এখন সময়ের দাবি।

আরও পড়ুন-

মন্দা বাজারেও আলো ছড়ালো 'বি' গ্রুপের ৬ শেয়ার

বাজার পর্যালোচনা

আজ শনিবারের (২৪ মে) ডিএসইর প্রধান সূচক গত ৪ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট সূচকটি আজকের তুলনায় কম ছিল। ওইদিন ডিএসইএক্স ছিল ৪ হাজার ৭২০ পয়েন্টে। আজ ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৪৬ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসইতে ২৭৮ কোটি ৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার পরিমাণ আগের দিন হয়েছিল ২৫৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ২৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বা ১০ শতাংশ।

আজ ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৭৪টির বা ১৮.৬৪ শতাংশের। আর দর কমেছে ২৭১টির বা ৬৮.২৬ শতাংশের ও দর পরিবর্তন হয়নি ৫২টির বা ১৩.১০ শতাংশের।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) আজ ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগেরদিন সিএসইতে ৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল।

এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৮১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৫০টির, কমেছে ১০৪টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২৭টির।

এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১১২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ২৭৪ পয়েন্টে। আগেরদিন সূচক সিএএসপিআই ১৫ পয়েন্ট বেড়েছিল।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে