ঢাকা, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

মেট্রোরেলে পাস সংকট: অনিয়ম, সমন্বয়হীনতা ও যাত্রী দুর্ভোগ

২০২৫ মে ২৪ ০৯:৫৬:৪০
মেট্রোরেলে পাস সংকট: অনিয়ম, সমন্বয়হীনতা ও যাত্রী দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার মেট্রোরেলে যাত্রীদের যাতায়াতে ব্যবহৃত একক ও স্থায়ী পাসের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এর পেছনে রয়েছে প্রশাসনিক সমন্বয়হীনতা, দায়িত্বে গাফিলতি এবং আগের সরকারের আমলে গৃহীত অসচ্ছ ও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, পাসের সংকট অনেকটা কেটেছে, শিগগিরই স্বস্তি মিলবে।

দুর্ভোগের মূল কেন্দ্র: একক পাসের সংকট

প্রতিদিন প্রায় চার লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে চলাচল করেন। এদের মধ্যে প্রায় দুই লাখের মতো যাত্রী একক পাস ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে একক পাসের সংখ্যা কমে মাত্র ৬০ হাজারে নেমে এসেছে, যার ফলে যাত্রীদের ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পাস না পাওয়ার ঘটনা ঘটছে।

২০২২ সালে মেট্রোরেল চালুর সময় ডিএমটিসিএল ৩ লাখ ২০ হাজার একক পাস কেনে। পরে জানানো হয়, এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার পাস ‘খোয়া গেছে’। কিন্তু এত বড় সংখ্যক পাস হারিয়ে যাওয়ার পরও ডিএমটিসিএল কোনো তদন্ত করেনি, নেওয়া হয়নি কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও।

স্থায়ী পাসেও চাপ, বাড়ছে চাহিদা

একক পাস সংকটে পড়ে অনেকেই স্থায়ী পাস—র‍্যাপিড ও এমআরটি পাস—ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। বর্তমানে স্থায়ী পাস ব্যবহারকারীর হার ৭০ শতাংশে পৌঁছেছে। এর ফলে র‍্যাপিড ও এমআরটি পাসের চাহিদাও বেড়ে যাচ্ছে, যা নতুন করে সংকট সৃষ্টি করছে।

ডিটিসিএ এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ র‍্যাপিড পাস সরবরাহ করেছে, আর ডিএমটিসিএল এমআরটি পাস কিনেছে ৭ লাখ ৩০ হাজার। চাহিদা অনুযায়ী নতুন করে আরও আড়াই লাখ র‍্যাপিড পাস কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৯০ হাজার ইতোমধ্যে সরবরাহের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়ের অভাব

একক পাস সরবরাহের দায়িত্ব ডিএমটিসিএলের হলেও র‍্যাপিড পাস দেয় ডিটিসিএ। এই দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দীর্ঘদিন ধরেই পাস সংকটকে তীব্র করেছে। ডিএমটিসিএলের অভিযোগ, তারা ডিটিসিএর কাছ থেকে ‘ট্রান্সপোর্ট কী’ না পাওয়ায় নতুন পাস কিনতে পারেনি। অন্যদিকে, ডিটিসিএ বলছে, সংকটের বিষয়টি হঠাৎ করে এত প্রকট হওয়ার কথা নয়।

সাবেক এমডির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ

ডিএমটিসিএলের সাবেক এমডি এম এ এন সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি জাইকার অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের অধীনে ডিটিসিএর জন্য র‍্যাপিড পাসের গোপনীয় কোড গোপন রেখে গোপনে এমআরটি পাস চালু করেন। তার সিদ্ধান্তেই র‍্যাপিড পাস স্টেশনে বিক্রি বন্ধ ছিল এবং বিকল্প ব্যবস্থার উদ্যোগও বাধাগ্রস্ত হয়।

বিক্রয় এজেন্টদের স্টেশনে বাধা, যাত্রীসেবায় নেতিবাচক প্রভাব

সম্প্রতি ডিটিসিএর পাস বিক্রয় ও রিচার্জ এজেন্টদের মেট্রো স্টেশনের বাইরে বসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। স্টেশন কন্ট্রোলাররা লিখিত অনুমতির শর্তে বসতে দিচ্ছেন না, ফলে যাত্রীসেবা ব্যাহত হচ্ছে। ডিএমটিসিএলের নিজস্ব বুথে দীর্ঘ লাইনের ভিড় সত্ত্বেও এজেন্টদের বাধা দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সাময়িক স্বস্তির আশ্বাস, দীর্ঘমেয়াদি সমাধান অনিশ্চিত

বর্তমানে কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন পাস সরবরাহের মাধ্যমে সংকট অনেকটা কেটেছে এবং পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হবে। তবে পাস হারানোর বিষয়ে তদন্তের অভাব, সমন্বয়হীনতা এবং প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব—সব মিলে সংকটের স্থায়ী সমাধান এখনো অনিশ্চিত।

ঢাকার যানজটে ক্লান্ত নাগরিকদের কাছে মেট্রোরেল স্বস্তির প্রতীক হলেও ব্যবস্থাপনার অনিয়ম, সমন্বয়ের অভাব ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এই সেবাটি অনেক ক্ষেত্রেই যাত্রী দুর্ভোগে পরিণত হচ্ছে। যাত্রীসেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত না করা গেলে এই আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে।

মারুফ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে