ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

ভুয়া কোম্পানিতে ৯ শত কোটি টাকার প্রকল্প

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৪ ১০:১০:৫৫
ভুয়া কোম্পানিতে ৯ শত কোটি টাকার প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনোস্টিম এনার্জি নামে ভুয়া একটি কোম্পানিকে কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) ৯ শত কোটি টাকার প্রকল্পের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল সাবেক জ্বালানি সচিব আবু হেনা রহমাতুল মুনিমের চাপে। কোম্পানিটির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রহমাতুল মুনিমের চাচা। যিনি এক সময় তিতাস গ্যাস কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ও পরবর্তী সময়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক ছিলেন।

অভিযোগ আছে-সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহীর ঘনিষ্ঠভাজন হওয়ায় এরকম ভয়াবহ জাল-জালিয়াতি ও বিডবন্ড আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকার পরও রহমাতুল মুনিমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উলটো তাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান করে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ঘটনায় তদন্ত করার জন্য একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করলেও তৎকালীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিমের চাপে সেই তদন্ত কার্যক্রমও আলোর মুখ দেখেনি।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন উপপরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিক এই ঘটনার তদন্ত করতে পেট্রোবাংলার কাছে এসংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য চেয়ে চিঠি দেন। কিন্তু রহমাতুল মুনিমের কারণে পেট্রোবাংলা সেই চিঠির এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর দেয়নি। দুদকের পক্ষ থেকেও অদ্যাবধি এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য চেয়ে পালটা চিঠি দেয়নি পেট্রোবাংলাকে। এই সুযোগে সিন্ডিকেটের একটি পক্ষ পেট্রোবাংলা থেকে এই প্রকল্পের সব ধরনের ডকুমেন্ট গায়েব করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এই সিন্ডিকেটের আরও যারা সদস্য ছিলেন তারা হলেন-পেট্রোবাংলার সাবেক একজন চেয়ারম্যান, যিনি এখন সচিব হিসাবে কর্মরত আছেন সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ে। তিনি ওই সময় পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) হিসাবে দায়িত্বে থেকে পুরো তদন্ত রিপোর্টটি ধামাচাপা দেন। পরে পুরস্কার হিসাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান পদটি বাগিয়ে নেন। এছাড়া বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌফিকুর রহমান তপু, প্রকল্পের তৎকালীন পিডি আবুল জাহিদ এবং বিজিএফসিএলের জেনারেল ম্যানেজার আমীর ফয়সাল, টেকনোস্ট্রিমের দেশীয় অংশীদার কোম্পানি মজুমদার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন চৌধুরী। অভিযোগ আছে-এই মজুমদার এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে এই সিন্ডকেটের মাধ্যমে জ্বালানি বিভাগ থেকে কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতিয়ে নিয়েছে। আমীর ফয়সালের দায়িত্বে ছিল বিডারের সঠিকতা যাচাই করা। কিন্তু তিনি তা না করে প্রস্তাবটি বোর্ডে উঠান।

জানা গেছে, বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ডের তিতাস লোকেশনে ৭টি ওয়েলহেড কম্প্রেসার স্থাপন প্রকল্প ঘিরেই উল্লিখিত দুর্নীতি ও লুটপাট বাণিজ্য হয়েছে। ৯১০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের শুরুতেই প্রভাবশালী এই চক্র দুর্নীতির ফাঁদ পাতে। জাল-জালিয়াতি করে এমন প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয় যার সক্ষমতা তো দূরের কথা, অফিশিয়াল অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বিজিএফসিএল সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ কোম্পানিটির অস্তিত্ব নিয়ে সেই সময় পেট্রোবাংলায় পিপিসি কমিটির এক বৈঠকে প্রশ্ন ওঠায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, টেকনোস্টিম এনার্জি নামে কোম্পানিটির লেটারহেড প্যাডে যুক্তরাষ্ট্রের যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছিল, সেখানে এর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ২০১৯ সালের প্রথমদিকে অর্থাৎ টেন্ডার আহ্বানের পরে কোম্পানিটির ওয়েবসাইট খোলা হয়েছিল। দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য তারা যেসব অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছে বাস্তবে কোম্পানিটি সেরকম কোনো কাজই করেনি।

অভিযোগ আছে-জ্বালানি বিভাগের তৎকালীন সচিব আবু হেনা রহমাতুল মুনিমের চাচাই মূলত একটি নামসর্বস্ব কোম্পানি খুলে এই দরপত্রে অংশ নিয়েছিলেন। তার সঙ্গে লোকাল এজেন্ট হিসাবে ছিল মজুমদার এন্টারপ্রাইজ। টার্গেট ছিল যেনতেন করে কার্যাদেশ নিয়ে ‘কাগজ’টি তৃতীয় পক্ষের কাছে মোটা অঙ্কের বিক্রি করে দেওয়া।

এস/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে