ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

হাসনাত ও সারজিসকে মাইনাস করার গুঞ্জন

২০২৫ আগস্ট ০৭ ১০:৫৪:২৬
হাসনাত ও সারজিসকে মাইনাস করার গুঞ্জন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট, গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তির দিন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার কক্সবাজার সফর ঘিরে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়। দলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা এবং আরও কয়েকজন নেতা এ সফরে উপস্থিত ছিলেন। দিনভর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে, তারা কক্সবাজারে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। তবে এনসিপি নেতারা এবং মার্কিন দূতাবাস উভয় পক্ষই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সফরটি নিয়ে বিভিন্ন গুঞ্জন ও বিতর্কে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়, এই সফরটি আসলে এনসিপির রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে, যেখানে তারা দেশের বাইরে থেকে দলের ভেতরকে পুনর্গঠন ও সংগঠিত করার কাজ করছে। একই সঙ্গে গুঞ্জন ছিল, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠক হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তবে এসব গুঞ্জনকে সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছে এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের একজন নেতা, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন, এই সফর ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত এবং অবকাশ যাপন উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, "দলের মধ্যে অনেকেই এই সফরের বিষয়ে অবগত ছিলেন না। পিটার হাসের সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়নি এবং এটি বিরোধীদের অপপ্রচার।"

বিভিন্ন এনসিপি নেতা এবং সমর্থকদের মধ্যে ৫ আগস্ট ঘোষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে নানা মতবিরোধের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। বর্ষপূর্তির দিন আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে কিছু দলের নেতারা অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকায় এ নিয়ে দলীয় ভেতরে কিছুটা অশান্তি রয়েছে।

যারা অনুষ্ঠানে অংশ নেননি তারা মনে করেন, ঘোষণাপত্রে শহীদ ও আহত নেতাকর্মীদের আত্মত্যাগের যথাযথ মর্যাদা ও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তাই তারা সরকার আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি এবং ঢাকায় থেকে অনুষ্ঠান সামলানো কঠিন হওয়ায় কক্সবাজার সফরে যান।

অন্যদিকে দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় দর্শক সারিতে বসতে হয়, যা অনেকের কাছে অপমানজনক ছিল। তাই নেতারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঢাকার বাইরে অবস্থান নিয়ে সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে বেশি প্রচার পাওয়ার চেষ্টা করেছেন।

এনসিপি নেতাদের কক্সবাজার আগমনের খবর জানার পর স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা সি পার্ল হোটেলের সামনে জড়ো হন। সেখানে নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী সাংবাদিকদের জানান, পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের খবর সম্পূর্ণ গুজব এবং তারা শুধুমাত্র অবকাশ যাপনের জন্য সেখানে এসেছেন।

হোটেল নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, ওই সময় পিটার হাস বা অন্য কোনো বিদেশি অতিথি হোটেলে ছিলেন না। ফলে বৈঠকের বিষয়ে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মনে করা হচ্ছে।

এই সফরকে কেন্দ্র করে এনসিপি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক পরিষদ হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলমসহ পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। তাদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে এবং সশরীরে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, দলীয় সম্মতি ছাড়া এ ধরনের সফর দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। নোটিশের মাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা ও নেতাদের আচরণ পর্যালোচনা করার চেষ্টা চলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসিপির এই ধরনের আচরণ দলটির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার প্রতিফলন। দল দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে থাকলেও এখন সংগঠন ও নেতৃত্বে কিছু টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে। এছাড়া দলটির ভেতরে কিছু নেতার মধ্যে অনাস্থাও বিরাজ করছে।

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, "যদি দল নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে, তবে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে তাদের কার্যকর ভূমিকা রাখা কঠিন হবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত থাকার প্রয়োজন বেশি।"

রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এনসিপির এই ধরনের আচরণ দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বর্ষপূর্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে নেতাদের এমন গোপন সফর ও বিতর্ক দলটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। এছাড়া এটি তাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির চেয়ে ক্ষতি করতে পারে।

তবে অনেকে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন, এই ধরনের বিতর্ক সত্ত্বেও যদি এনসিপি নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যকার মতভেদ দূর করে একযোগে রাজনীতির ময়দানে ফিরে আসে, তাহলে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের আকস্মিক কক্সবাজার সফর এবং তা নিয়ে সৃষ্ট গুঞ্জন ও বিতর্ক বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন জল্পনা সৃষ্টি করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই সফরের আসল উদ্দেশ্য কী ছিল? এনসিপি কি কেবল অবকাশ যাপন করছিল নাকি রাজনৈতিক পুনর্গঠন ও সংগঠনের জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়েছিল?

সময়ের সঙ্গে এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে