ঢাকা, সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

১০৩ দিনে ১২০টি ওষুধ কারখানার অনুমোদন!

২০২৪ জুলাই ০৬ ১৬:৪২:৩০
১০৩ দিনে ১২০টি ওষুধ কারখানার অনুমোদন!

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ছয় মাসে ১২০টি নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই ছয় মাসের মধ্যে মোট কর্মদিবস ছিল ১০৩টি। সেই হিসাবে দিনে গড়ে একটির বেশি কারখানা অনুমোদন পেয়েছে, যার বড় অংশই ইউনানি, হারবাল ও আয়ুর্বেদিক। হঠাৎ এত বেশি ওষুধ কারখানা অনুমোদন নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কিছু মানুষ কালোটাকা বিনিয়োগ এবং ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নেওয়ার জন্যই কারখানার অনুমোদন নিয়ে থাকতে পারেন। কেউ হয়তো গ্রামাঞ্চলে তৈরি হওয়া বাজার ধরতে নতুন কারখানা গড়ছেন, আবার অনেকে প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার দেখে বাংলাদেশও আয়ুর্বেদিক ওষুধের বড় বাজার হবে বলে মনে করছেন।

এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ গণমাধ্যমকে বলেন, ঔষধ ও কসমেটিকস আইন পাস হওয়ার পর অনেকে নতুন প্রকল্প নিচ্ছেন। অনেকের ওষুধের ব্যবসা রয়েছে। তাঁরা নতুন করে ইউনানি, হারবাল ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এ কারণে নতুন প্রকল্প বেশি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে দেশে সব ধরনের ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠান রয়েছে হাজারখানেক। অ্যালোপ্যাথিক কোম্পানিগুলোর মধ্যেও ৩০-৪০টি প্রতিষ্ঠান চাহিদার মান ঠিক রেখে চাহিদার ৯৫ শতাংশ ওষুধ তৈরি করছে।

অন্যগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক; বিশেষ করে বিকল্প ওষুধের ক্ষেত্রে খুবই সমস্যা হচ্ছে। এগুলোর গুণমান ও দাম—কোনোটিই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে নতুন প্রকল্প অনুমোদনের কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন ওষুধশিল্পের মালিক ও বিশেষজ্ঞরা।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের গত ৫ বছরের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওষুধ কারখানার অনুমোদন পেয়েছে গত নভেম্বর থেকে এপ্রিলে। ২০২০ সালে ২০টি, ২০২১ সালে ২৪টি, ২০২২ সালে ২৯টি, ২০২৩ সালে ৭৫টি এবং ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৬০টি কারখানার অনুমোদন দেয় অধিদপ্তর।

জানা যায়, গত বছরের ২৬ নভেম্বর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রকল্প অনুমোদন কমিটির ১১৩তম সভায় ৬৫টি নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। আর চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল ১১৪তম সভায় অনুমোদন দেওয়া হয় ৫৫টি নতুন কারখানার। এসব নতুন কারখানার মধ্যে ২৫টি অ্যালোপ্যাথিক, ৬৫টি হারবাল, ১৩টি ইউনানি, হোমিওপ্যাথি ৪টি, আয়ুর্বেদিক ৭টি, মেডিকেল ডিভাইস ২টি, কসমেটিকস ২টি ও ১টি ফিড কারখানা রয়েছে।

সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ঢাকা জেলায়। এ সময়ে ঢাকায় ১৪টি হারবাল, ২টি অ্যালোপ্যাথিক, ১টি ইউনানি, ২টি হোমিওসহ মোট ১৯টি কারখানার অনুমোদন পেয়েছে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারখানা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বগুড়ায়। সেখানে হারবাল ৮টি, আয়ুর্বেদিক ৩টি, ইউনানি ৩টি ও অ্যালোপ্যাথিক ২টিসহ মোট ১৬টি কারখানা অনুমোদন পায়।

এ ছাড়া গাজীপুরে ৫টি হারবাল ও ৬টি অ্যালোপ্যাথিক মিলিয়ে মোট ১১টি, নারায়ণগঞ্জে ১টি আয়ুর্বেদিক, ২টি হারবাল এবং ১টি করে অ্যালোপ্যাথিক ও ইউনানি কারখানা অনুমোদন পেয়েছে।

ঔষধ প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ কারখানা রয়েছে ৩১৫টি। এগুলোর মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৬৪টি। ইউনানি ২৮৭টির মধ্যে বন্ধ ১৯টি। আয়ুর্বেদিক ২০৫টির মধ্যে ১৬টি, হারবাল ৪৪টির মধ্যে ৩টি এবং হোমিও ৭১টির মধ্যে বন্ধ রয়েছে ১৭টি। অর্থাৎ ৯২২টি কারখানার মধ্যে বন্ধ রয়েছে ১১৯টি। এসব কারখানা দেখভাল করার মতো পর্যাপ্ত জনবল অধিদপ্তরের নেই।

বাংলাদেশ হেলথ কনজ্যুমারস রাইট ফোরাম জানিয়েছে, ৬ মাসে ১২০টি নতুন কারখানা অনুমোদন দেওয়া হলো লুটপাট। সংগঠনের সদস্যসচিব ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, সরকারের দুর্বলতায় ঔষধ প্রশাসনে লুটপাট চলছে, যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এসব অনিয়ম জনগণের সামনে তুলে ধরার অনুরোধ করেন তিনি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি) ঔষধ প্রশাসনের অনিয়ম নিয়ে ২০১৫ সালে গবেষণা চালায়। প্রকল্প স্থানান্তর বা হস্তান্তরের সময় ১৫ লাখ, ছাড়পত্রে ৫-১০ লাখ, লাইসেন্স নবায়নে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ, রেসিপি অনুমোদন ৪-৫ হাজার, ওষুধ নিবন্ধন ১ থেকে দেড় লাখ পর্যন্ত ঘুষ লেনদেনের তথ্য উঠে আসে এতে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান নতুন ওষুধ কারখানা অনুমোদনের ক্ষেত্রেও এমন অর্থ লেনদেন হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবি তুলে বলেন, ওষুধের মান খুব গুরুত্বপূর্ণ। যাদেরকে তড়িঘড়ি ওষুধ তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তাদের সে সক্ষমতা আছে কি না, যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কি না, বিষয়টি ক্ষতি দেখতে হবে।

তিনি বলেন, ওষুধের মান দেখার দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের। তারা যদি রক্ষকের জায়গায় ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে এবং তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

তারিক/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে