ঢাকা, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা

২০২৫ ডিসেম্বর ২১ ১০:২০:৪৪
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ নির্বাসন শেষে বিএনপির রাজনীতিতে বড় এক প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষা। ১৭ বছরের বেশি সময় পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর আগমন ঘিরে রাজধানী ঢাকায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়েছে রাষ্ট্র ও দল—যেখানে থাকবে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিএনপির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত ব্যবস্থা।

সূত্র জানায়, ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান দেশে ফেরার দিন পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় দুই হাজার সদস্য তাঁর নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)–এর অধীনে দলীয় ব্যবস্থাপনাতেও আলাদা নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হচ্ছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল হয়ে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের বাসভবন পর্যন্ত পুরো রুটে এই নিরাপত্তা কার্যক্রম কার্যকর থাকবে। বাসা, অফিস এলাকা ও চলাচলের পথজুড়ে নেওয়া হচ্ছে কঠোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রাথমিক নির্দেশনা দেওয়া হলেও চূড়ান্ত নিরাপত্তা পরিকল্পনা আজ সোমবার চূড়ান্ত হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে তারেক রহমানের নিরাপত্তায় ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে সার্বিক নিরাপত্তার প্রধান দায়িত্ব থাকবে বিএনপির চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সের ওপর। পুলিশ, সিএসএফ এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ বিষয়ে সমন্বয় চলছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গুলশান অ্যাভিনিউয়ের নির্ধারিত বাসভবনটি তারেক রহমানের জন্য প্রায় প্রস্তুত। কোনো কারণে সেটি ব্যবহারযোগ্য না হলে তিনি অস্থায়ীভাবে তাঁর মা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া–এর বাসভবন ‘ফিরোজা’য় অবস্থান করবেন। গুলশানের ৮৬ নম্বর রোডে দলের কার্যালয় থেকেই তিনি রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ফিরোজা ও তারেক রহমানের নতুন বাসভবন পাশাপাশি হওয়ায় দুটি বাসা ও অফিস এলাকা একই নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনা হচ্ছে। বাসা ও অফিসের মধ্যকার চলাচলের পথকেও নিরাপত্তা পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ২৩ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকেই পুলিশের টহল ও নজরদারি জোরদার হতে পারে। সাদা পোশাক ও ইউনিফর্মধারী পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তায় থাকবেন। ২৫ ডিসেম্বর বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত প্রতিটি থানা এলাকায় থাকবে পুলিশি পাহারা, বিশেষ এস্কর্ট এবং বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট।

বর্তমানে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় অন্তত নয়টি চেকপোস্ট চালু রয়েছে। তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে গুলশান এলাকায় আরও কয়েকটি চেকপোস্ট বাড়ানো হতে পারে। বাসভবন এলাকায় প্রতিদিন দেড় শতাধিক পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী এই সংখ্যা তিন শতাধিকেও উন্নীত হতে পারে।

শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, গুলশান অ্যাভিনিউয়ের বাড়ির সামনে পুলিশ ও সিএসএফ সদস্যরা অবস্থান করছেন। ভেতরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পাশেই অবস্থিত ফিরোজা ভবনের সামনেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা জানান, বাসা প্রস্তুতির কাজ শেষ পর্যায়ে। আপাতত ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না এবং সব ধরনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রওনক আলম বলেন, বিভিন্ন ইউনিট সমন্বিতভাবে কাজ করছে। চূড়ান্ত নির্দেশনা পেলে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে।

উল্লেখ্য, খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিভিআইপি) ঘোষণার পর তাঁর নিরাপত্তায় স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) দায়িত্ব পালন করছে। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বাসায় ফিরলে তখন এসএসএফ, সিএসএফ ও পুলিশের সমন্বয়ে একটি যৌথ নিরাপত্তা বলয় কার্যকর থাকবে।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে ‘প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা’ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

সূত্র মতে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ২৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে তারেক রহমান ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি ট্রাভেল পাস পেয়েছেন এবং বিমানের টিকিটও কাটা হয়েছে।

তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটি এই প্রত্যাবর্তনকে ঐতিহাসিক করতে নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত যাতায়াত, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। পাশাপাশি অভ্যর্থনার স্থানও চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে