ঢাকা, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

বাংলালিংককে শেয়ার ছাড়তে হবে ১৫%, রবিকে আরও ৫% শেয়ার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৪ ২৩:১৩:৪০
বাংলালিংককে শেয়ার ছাড়তে হবে ১৫%, রবিকে আরও ৫% শেয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে দীর্ঘদিনের জটিলতা ও সীমাবদ্ধতা কাটাতে নতুন নীতিমালা কার্যকর হয়েছে। ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং’ শীর্ষক নীতিমালাটি সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পাওয়ার পর গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগে সীমা নির্ধারণ, লাইসেন্স কাঠামো সহজীকরণ এবং অবকাঠামো ভাগাভাগি বাধ্যতামূলক করার মতো বেশ কিছু বড় পরিবর্তন এসেছে।

সবচেয়ে আলোচিত দিক হলো বিদেশি মালিকানার সীমা কমানো। আগে যেখানে টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোতে শতভাগ বিদেশি মালিকানা অনুমোদিত ছিল, এখন থেকে সর্বোচ্চ সীমা হবে ৮৫ শতাংশ। ফলে বাংলালিংককে ছাড়তে হবে ১৫ শতাংশ শেয়ার এবং রবিকে আরও ৫ শতাংশ। গ্রামীণফোন ইতোমধ্যেই দেশি অংশীদারিত্ব বজায় রেখেছে বলে বড় কোনো পরিবর্তন তাদের জন্য আসছে না। সরকার বলছে, এ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশীয় অংশীদারদের সুযোগ তৈরি হবে এবং শেয়ারবাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

নীতিমালায় ফাইবার অপটিক্স, টাওয়ার ও অন্যান্য টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোয় বিদেশি বিনিয়োগের নতুন পথও উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে শর্ত হলো—টাওয়ার ও ফাইবার পরিচালনায় বিদেশি শেয়ারের সীমা সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক সংযোগ সেবায় ৪৯ শতাংশ। এভাবে বিদেশি বিনিয়োগে সুযোগ রাখলেও দেশীয় মালিকানার উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে।

লাইসেন্স কাঠামোতেও এসেছে বড় পরিবর্তন। আগে ২৬ ধরনের আলাদা লাইসেন্স থাকলেও এখন সবকিছু মিলিয়ে রাখা হবে চারটি মূল লাইসেন্স ক্যাটেগরির অধীনে। এগুলো হলো—অ্যাক্সেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার, ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড কানেক্টিভিটি প্রোভাইডার, ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি প্রোভাইডার এবং নন-টেরেস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার। এর বাইরে বিশেষ কিছু টেলিকম-এনাবলড সেবার জন্য থাকবে আলাদা তালিকাভুক্তি ব্যবস্থা।

নীতিমালার প্রেক্ষাপটে দেশি উদ্যোক্তাদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন বলছে, শতাধিক দেশীয় লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান ব্যবসা হারিয়ে ফেলবে এবং বিদেশি অপারেটররা বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করবে। তাদের অভিযোগ, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের স্বার্থ উপেক্ষা করে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুযোগ করে দিতে নীতি পরিবর্তন করা হয়েছে।

অন্যদিকে সরকার বলছে, গ্রাহকের স্বার্থই এখানে অগ্রাধিকার পেয়েছে। নতুন নীতিমালায় অবকাঠামো ভাগাভাগি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যাতে ইন্টারনেট ও ভয়েস সেবার মান উন্নত হয় এবং খরচ কমে আসে। আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ারকে ফাইবার নেটওয়ার্কে যুক্ত করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উপকূলীয় ও দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের বিষয়েও আলাদা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ ও সাইবার নিরাপত্তা নিয়েও নীতিমালায় বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। টাওয়ার ও ডেটা সেন্টারে সৌরশক্তি ব্যবহার, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ এবং সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, শুধু নীতি নয়—বাস্তবায়নই এখানে বড় চ্যালেঞ্জ। অতীতে অনেক নীতিমালা কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ ছিল। এবার যদি কার্যকর বাস্তবায়ন হয়, তবে নতুন নীতিমালা গ্রাহক, সরকার ও উদ্যোক্তা—সবার জন্যই ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে