ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

তদন্তের জালে সরকারি-বেসরকারি ২৬ ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা

২০২৫ আগস্ট ২৬ ১৭:৪৬:২০
তদন্তের জালে সরকারি-বেসরকারি ২৬ ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এর অংশ হিসেবে ২৬টি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতিমধ্যেই তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সম্পদের তথ্য তলবসহ তদন্ত শুরু করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ১৯ আগস্ট দুদক চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে জানায়, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর এবং বিএফআইইউ প্রধানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক—সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক—এর তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যান, পরিচালক ও এমডিরাও এই তদন্তের আওতায় আনা হবে। একইসঙ্গে ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ১৮টি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারাও এই তদন্তের অন্তর্ভুক্ত।

দুদক ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন সাবেক গভর্নর—ড. আতিউর রহমান, ড. ফজলে কবির এবং আবদুর রউফ তালুকদার—সহ ছয়জন সাবেক ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য এটি সরকারের একটি বড় সংস্কার উদ্যোগ। পুনর্গঠিত বা একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা সব বেসরকারি ব্যাংকও এই তদন্তের আওতায় রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত ব্যাপক অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের জন্য সুপরিচিত ছিল। বেসিক ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণের কারণে কার্যত ভেঙে পড়েছে। পদ্ধতিগত অনিয়মের কারণে ১৮টি বেসরকারি ব্যাংকও দুর্বল হয়ে পড়েছে, যার মধ্যে এস আলম গ্রুপের ছয়টি ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পর ১৫টি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং এই ব্যাংকগুলো এখন তদন্তাধীন। এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে: ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইউসিবি, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক।

এছাড়া, এবি ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক—এই তিনটি ব্যাংকের কর্মকর্তারাও তদন্তাধীন। এদের বোর্ডগুলোও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গঠিত হয়েছিল এবং লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের পূর্তি উপলক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা যোগসাজশ করে টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন। এক ব্যাংকের চেয়ারম্যান, যিনি একসময় আমার ছাত্র ছিলেন, তিনি স্বীকার করেছেন যে তার ব্যাংকের ৯৫% ঋণ খেলাপি — অর্থাৎ প্রায় পুরো টাকা মালিক ও পরিচালকরা তুলে নিয়েছেন।" এই মন্তব্যই দেশের ব্যাংকিং খাতের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে।

তহা/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে