ঢাকা, সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

সেলিব্রেটিদের শোকের নেপথ্যের ষড়যন্ত্র ফাঁস করলেন জুলকারনাইন 

২০২৫ আগস্ট ১৮ ১৩:২৪:০২
সেলিব্রেটিদের শোকের নেপথ্যের ষড়যন্ত্র ফাঁস করলেন জুলকারনাইন 

নিজস্ব প্রতিবেদক: আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সাঈদের একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দাবি করা হয়েছে যে, ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন সেলিব্রিটিদের শোক জানিয়ে পোস্ট করার পেছনে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য রয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, অনেক তারকাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে বা বিভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত করে পোস্ট দিতে বাধ্য করা হয়েছে এবং এটি ছিল আওয়ামী লীগের একটি সুপরিকল্পিত প্রচারণা।

জুলকারনাইন সাঈদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি নির্দিষ্ট ন্যারেটিভ বা আখ্যান তৈরি করা। এর মাধ্যমে শেখ মুজিবের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন অবদানকে মহিমান্বিত করা হয়েছে, কিন্তু ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তার শাসনামলের বিতর্কিত বিষয়গুলোকে সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

অভিযোগ করা হয় যে, এই প্রচারণার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে:

কিছু তারকা genuinely শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

অনেকে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সমর্থক বা সুবিধাভোগী।

কাউকে অর্থের বিনিময়ে বা বিজ্ঞাপন জগতের "আওয়ামী মাফিয়া"-দের দ্বারা প্রভাবিত করে পোস্ট করানো হয়েছে।

মূল কৌশল ছিল এমন সেলিব্রিটিদের ব্যবহার করা, যাদেরকে সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে আওয়ামীপন্থী বলে মনে করে না। এর মাধ্যমে একটি বিভ্রান্তি তৈরি করে সাধারণ মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে, সবাই শোকাহত।

যেসব ঐতিহাসিক বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে

প্রতিবেদনে বলা হয়, শোকের পোস্টগুলোতে শেখ মুজিবের শাসনামলের কিছু অন্ধকার দিক ইচ্ছাকৃতভাবে উল্লেখ করা হয়নি, যেমন:

রক্ষীবাহিনী গঠন: এই বাহিনীকে একটি ভয়ংকর শক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যারা অপহরণ, গুম, নির্যাতন ও হত্যার মাধ্যমে দেশে আতঙ্ক তৈরি করেছিল। অভিযোগ করা হয়, রক্ষীবাহিনীর হাতে প্রায় ৪০,০০০ মানুষ খুন হয়েছিল, যাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক বিরোধীরাও ছিলেন।

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ: বলা হয়েছে, মুজিব সরকারের চরম অযোগ্যতা, দুর্নীতি এবং অমানবিক উদাসীনতার কারণে এই দুর্ভিক্ষে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল।

একদলীয় শাসন ও দমন-পীড়ন: ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে এবং বিরোধীদের দমন করতে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এই ডিজিটাল প্রচারণা বাস্তবায়নের জন্য ১৪ই আগস্ট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা কিছু প্রভাবশালী ইউটিউবার ও পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিনোদন জগতে প্রভাব রয়েছে এমন একজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিককে এই প্রচারণার নকশা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

শুরুতে, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তারিন, অরুণা বিশ্বাস, সাজু খাদেমের মতো শিল্পীরা পোস্ট দিয়ে একটি প্রাথমিক তরঙ্গ তৈরি করেন।

এরপর বাংলা সিনেমার একজন শীর্ষ নায়কের পোস্টকে "সেন্ট্রাল ভ্যালিডেশন" বা কেন্দ্রীয় সমর্থন হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে পোস্ট দিতে বাধ্য করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই প্রচারণায় জাহের আলভী নামে একজন "এফ-গ্রেড" ইউটিউব নাটকের নায়ককেও ব্যবহার করা হয়, যিনি ১৫ই আগস্টের আগে "মুক্তিযুদ্ধবিরোধী" দের আনফ্রেন্ড করার হুমকি দিয়ে এবং পরে শোক জানিয়ে পোস্ট দেন। পুরস্কার হিসেবে পরদিন প্রথম আলোতে তাকে নিয়ে ফিচার করা হয়, যা এই প্রচারণার অংশ বলে দাবি করা হয়।

শেষে জুলকারনাইন সাঈদের বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলা হয়, আওয়ামী লীগ এখন একটি "সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার" বা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা এবং নিজেদের ১৬ বছরের দুঃশাসন, ভোট চুরি ও রাজনৈতিক দমন-পীড়নের বিষয়গুলো থেকে মানুষের মনোযোগ সরিয়ে দেওয়া। "আগেই ভালো ছিলাম" বা "আওয়ামী লীগই ভালো ছিল" – এই ধারণা মানুষের মনস্তত্ত্বে চাপিয়ে দেওয়াই এই প্রচারণার মূল লক্ষ্য বলে দাবি করা হয়েছে।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

বিনোদন এর সর্বশেষ খবর

বিনোদন - এর সব খবর



রে