ঢাকা, সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

আশরাফ টেক্সটাইলের ৭২ কোটি টাকা আত্মসাত: বিএসইসি’র তদন্ত

২০২৫ আগস্ট ১৮ ০৭:০১:০৫
আশরাফ টেক্সটাইলের ৭২ কোটি টাকা আত্মসাত: বিএসইসি’র তদন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর এক তদন্তে দেশের প্রাচীনতম টেক্সটাইল কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম আশরাফ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডে বড় ধরনের সম্পদ আত্মসাতের কেলেঙ্কারির ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কোম্পানিটি নিষ্ক্রিয় ছিল।

তদন্তে জানা গেছে, ২০০৯ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে তালিকাচ্যুত হওয়া এবং ২০০৬ সাল থেকে উৎপাদন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কোম্পানিটি অবৈধভাবে প্রায় ৮৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকার জমি ও সম্পত্তি বিক্রি করেছে। বিএসইসি এই বিক্রয়লব্ধ অর্থের মধ্যে প্রায় ৭২ কোটি টাকার কোনো ব্যাংক রেকর্ড বা লেনদেনের প্রমাণ খুঁজে পায়নি। আর্থিক এই অনিয়ম এবং কোম্পানি আইন ও শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার লঙ্ঘনের কারণে আশরাফ টেক্সটাইল কর্পোরেট অসদাচরণের এক জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

তদন্তকারীরা দেখতে পেয়েছেন, রাজধানীর উপকণ্ঠে টঙ্গীতে ৪২ বিঘা জমি মাত্র ৮৫ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে, অথচ এর বাজারমূল্য ছিল ১৩৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা—যা প্রায় ৫১ কোটি ৫৪ লাখ টাকার বিশাল ফারাক নির্দেশ করে।

একইভাবে আশরাফ সেতু শপিং কমপ্লেক্সের ২০ শতাংশ অংশ প্রতি বর্গফুট ১ হাজার ২৭২ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে, যা সেই সময়ের প্রচলিত মূল্যের প্রায় অর্ধেক। এই লেনদেন থেকে প্রাপ্ত ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি।

বিএসইসি'র মতে, আশরাফ টেক্সটাইল যেসব আইন লঙ্ঘন করেছে তার মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো-২০০৯ সাল থেকে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা; বোর্ড মিটিংয়ের অনুমোদন ছাড়াই জমি বিক্রি করা; শেয়ারহোল্ডারদের অবহিত না করে কোম্পানির সম্পদ হস্তান্তর করা; অবৈধভাবে চুক্তি স্বাক্ষর করা,যেমন সেতু কর্পোরেশনের সঙ্গে শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের চুক্তি এবং আর্থিক তথ্যের অস্বচ্ছতা এবং গোপনীয়তা বজায় রাখা।

কোম্পানির বর্তমান বোর্ড বারবার শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন ছাড়াই সম্পদ বিক্রি করেছে। সম্পত্তি বিক্রি, উন্নয়ন চুক্তি এবং শপিং কমপ্লেক্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্তই এজিএম বা বোর্ডের প্রস্তাব ছাড়াই নেওয়া হয়েছে। আশরাফ টেক্সটাইল দাবি করেছিল যে জমি বিক্রির একটি বড় অংশ প্রাক্তন কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, অব্যবহৃত ছুটি এবং গ্র্যাচুইটি বাবদ ব্যয় হয়েছে। তবে বিএসইসি এই দাবির সপক্ষে কোনো ব্যাংক রেকর্ড বা নথি খুঁজে পায়নি। তদন্তকারীরা মনে করেন, এই দাবিগুলো আসলে অর্থ আত্মসাৎ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ৭২ কোটি টাকা সরাসরি পরিচালকদের কাছ থেকে উদ্ধার করে নতুন প্রকল্পে, যেমন আশরাফ টেক্সটাইলের উৎপাদন পুনরায় শুরু করার জন্য, পুনঃবিনিয়োগের সুপারিশ করেছে। তহবিল ফেরত না আসা পর্যন্ত বিএসইসি পরিচালকদের শেয়ার স্থগিত বা জব্দ করারও প্রস্তাব দিয়েছে।

প্রতিবেদনে আশরাফ টেক্সটাইলকে হালনাগাদ বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ, এজিএম অনুষ্ঠিত করা এবং বোর্ডের পুনর্গঠন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একটি সঠিক ও স্বচ্ছ আর্থিক চিত্র তুলে ধরতে আর্থিক বিবরণীগুলো পুনরায় প্রকাশের পাশাপাশি, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য কঠোর কর্পোরেট গভর্নেন্স বিধি প্রয়োগের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত আশরাফ টেক্সটাইল দেশের প্রথম দিকের অন্যতম বৃহৎ টেক্সটাইল মিল ছিল। এটি টঙ্গীর আশরাফাবাদে ১২,৪০০ স্পিন্ডল এবং দৈনিক ৪২০ পাউন্ড সুতা উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এটি জাতীয়করণ করা হলেও পরে আবার মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে পুরনো যন্ত্রপাতি, শ্রমিক অসন্তোষ এবং ঋণের কারণে মিলটি ক্রমশ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে।

এর অন্যতম ঋণদাতা রূপালী ব্যাংক ঋণের কিস্তি পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হলে আশরাফ টেক্সটাইল নিলামের তালিকায় চলে আসে। কোনো ব্যাংক নতুন করে ঋণ দিতে রাজি না হওয়ায় ২০০৬ সালের মার্চ মাসে বোর্ড কারখানাটি বন্ধ করে দেয় এবং ২০০৯ সালের অক্টোবরে কোম্পানিটি ডিএসই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকাচ্যুত হয়।

বিএসইসি'র এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন বর্তমানে চলমান রয়েছে। এছাড়াও, অর্থ পাচারের সম্ভাব্য বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য কমিশন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করেছে।

মামুন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে