ঢাকা, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

২ বছরের স্বপ্ন ভেস্তে গেল দুই মিনিটে

২০২৫ জুলাই ১২ ১৩:৪৭:২৬
২ বছরের স্বপ্ন ভেস্তে গেল দুই মিনিটে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা এখন অভাবনীয় ভিসা সংকটে পড়েছেন। ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা কিংবা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভিসা পেতে গিয়ে একের পর এক বাধার মুখে পড়ছেন তারা। উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি তুলনামূলক সহজ ভিসা দেওয়া দেশগুলোও এখন বাংলাদেশিদের আবেদন ফেরত দিচ্ছে—তা-ও কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই।

ভারতের চেন্নাইয়ের এশিয়ান কলেজ অব জার্নালিজমে ফুল স্কলারশিপ পেয়েছেন রিগ্যান মোর্শেদ (ছদ্মনাম)। ক্লাস শুরু হয়েছে গত ২৬ জুন, কিন্তু এখনো ভারতে প্রবেশ করতে পারেননি তিনি। কারণ—ভিসা পাননি। আবেদন করেছিলেন ১১ জুন, এখনও কোনো সাড়া নেই।তিনি বলেন, “চাকরি ছেড়ে পড়াশোনায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এখন সব অনিশ্চিত।”

তার মতো পরিস্থিতিতে আরও দুই শিক্ষার্থীও পড়েছেন, যাদের মধ্যে একজন ভিসা পেলেও বাকি দুজন এখনো অপেক্ষায়।

নিয়মিত চীন সফরকারী এক ব্যবসায়ী জানালেন, তিন বছরে ছয়বার চীন গেছেন, এবার রিজেকশন!থাই ভিসাও ফেরত এসেছে কনা করিম নামের এক পেশাদারের, যিনি ইউরোপ-আমেরিকা ঘুরে এসেছেন অনেকবার।

এমনকি তাজিকিস্তানের মতো তুলনামূলক সাধারণ ই-ভিসাও মিলছে না। পরিচিত ইউটিউবার ও ভ্রমণ ব্লগার নাদির নিবরাস জানান, তার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার বৈধ ভিসা থাকার পরও তাজিকিস্তানের ই-ভিসা মেলেনি। একই অভিজ্ঞতা হয়েছে মলদোভা ও বাহরাইনের ক্ষেত্রেও।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকলে বাস্তবতা অনেক কঠিন। উন্নত দেশের ভিসা পেতে হলে বিতর্কিত দেশের ভিসা থাকা যেন বিপরীত প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়।”

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ভারত কার্যত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বন্ধ রেখেছে। এখন শুধু জরুরি মেডিকেল ও শিক্ষাবিষয়ক আবেদনগুলোকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তবে আবেদনকারীরা বলছেন, সেখানেও ভিসা পাওয়া সহজ নয়।

ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, “আমরা ধাপে ধাপে অন্যান্য ভিসা চালুর চিন্তা করছি। আপাতত মেডিকেল ও শিক্ষাবিষয়ক আবেদনগুলো অগ্রাধিকার পাচ্ছে।”

কিন্তু ভারতীয় হাইকমিশন সূত্র বলছে, নিরাপত্তা কারণে হাইকমিশনের অনেক কর্মকর্তা এখনো বাংলাদেশে ফেরেননি। ফলে জনবল সংকট ও দুই দেশের শীতল সম্পর্ক এই জটিলতা বাড়িয়ে তুলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহামা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের খরচে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থী জানান, “আমার দুই বছরের প্রস্তুতি দূতাবাসে মাত্র দুই মিনিটে শেষ হয়ে গেল। চোখের সামনে ১০–১২ জন শিক্ষার্থীর আবেদনও প্রত্যাখ্যাত হতে দেখেছি।”

তিনি বলেন, “সেদিন গণঅভ্যুত্থানে নিহত মীর মুগ্ধের ভাই মীর স্নিগ্ধও স্ত্রীসহ ভিসা না পেয়ে ফিরে গেছেন।” যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, “ভিসা মঞ্জুর করা সংশ্লিষ্ট কনসুলারের দায়িত্ব, এমনকি রাষ্ট্রদূতও এতে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।”

একাধিক ট্রাভেল এজেন্সি ও ভিসা প্রসেসিং প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতাও একই। মুবিন এয়ার সার্ভিসের মার্কেটিং অফিসার রাসেল খান বলেন, “আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো সহজেই ভিসা দিতো, এখন তারাও রিজেকশন দিচ্ছে।”

‘দ্য মনিটর’-এর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদউদ্দিন আলম বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অবৈধ অভিবাসনের কারণে এখন অনেক দেশ বাংলাদেশের ওপর আস্থা হারাচ্ছে। এটা কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা দরকার।”

ভিএফএস গ্লোবালের এক কর্মী বলেন, “ভিসা প্রসেসিংয়ে আমাদের ভূমিকা থাকলেও সিদ্ধান্ত আসে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস থেকে। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, এখন বাংলাদেশিদের রিজেকশন হার বেশ বেড়েছে। কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তা শঙ্কা ও অতীতে জাল কাগজপত্র জমা দেওয়ার নজির উল্লেখযোগ্য।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, “রিজেকশন বেড়েছে—এমন কোনো সরকারি পরিসংখ্যান আমাদের হাতে নেই। তবে আমরা জানি, অনেকে যথাযথ কাগজপত্র জমা দেন না, আবার কিছু দেশ যাচাই-বাছাই বাড়িয়েছে।”

প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “ভিসা জটিলতার অন্যতম কারণ হচ্ছে জাল সনদ ও ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট। এর বিরুদ্ধে কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে