ঢাকা, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

এসএসসি ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ, পাসের হার রেকর্ড নিচে

২০২৫ জুলাই ১১ ০৮:০১:৪৭
এসএসসি ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ, পাসের হার রেকর্ড নিচে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় যে পাসের হার ক্রমাগত বাড়ছিল, চলতি বছর সেই ধারা সম্পূর্ণভাবে পাল্টে গেছে। গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পাসের হার রেকর্ড করা হয়েছে ৬৮.৪৫ শতাংশ, যা ২০১০ সালের ৭৮.১৯ শতাংশের চেয়েও কম।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) নয়টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা উল্লাসে মেতে উঠলেও, সার্বিক ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে এক ভিন্ন চিত্র। গত বছরের ৮৩.০৪ শতাংশ পাসের হারের চেয়ে এবার ১৪.৫৯ শতাংশ কম।

আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। ফলাফল বিশ্লেষণে তিনি তিনটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেন: গণিত ও ইংরেজিতে শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্য হওয়া, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বোর্ডের ফল বিপর্যয়, এবং কেন্দ্র ব্যবস্থাপনায় কড়াকড়ি আরোপ ও 'যথাযথভাবে' খাতা মূল্যায়নের উদ্যোগ।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবার গণিত ও ইংরেজিতে শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে খারাপ করেছে। প্রায় ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে পাস নম্বর তুলতে পারেনি। সব বোর্ড মিলিয়ে গণিতে পাসের হার ছিল মাত্র ৭৭.৪৬ শতাংশ। পাসের হারে পিছিয়ে থাকা বোর্ডগুলোর শিক্ষার্থীরাই গণিতে সবচেয়ে খারাপ করেছে।

গণিতে সর্বনিম্ন পাসের হার ছিল বরিশাল বোর্ডে, মাত্র ৬৪.৬২ শতাংশ। ময়মনসিংহ বোর্ডেও গণিতে পাসের হার ছিল ৬৪.২৭ শতাংশ। এই দুটি বোর্ডের গণিত এবং ইংরেজির ফল সামগ্রিক পাসের হারের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে। ইংরেজিতেও সবচেয়ে খারাপ করেছে বরিশাল বোর্ডের শিক্ষার্থীরা, যেখানে পাসের হার ছিল মাত্র ৬৯.৬৬ শতাংশ। রাজশাহী বোর্ড ছাড়া অন্য কোনো বোর্ডের শিক্ষার্থীরাই ইংরেজিতে সন্তোষজনক ফলাফল করতে পারেনি।

ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এহসানুল কবির বলেন, "উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়নের পর যা এসেছে, সেটি উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে আমাদের কোনো হাত নেই।"

প্রতিবারের মতো এবারও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করেছে, পাসের হার ৮৫.৬৮ শতাংশ। তবে, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের ফল খুবই খারাপ হয়েছে। বাণিজ্য বিভাগে পাসের হার ৬৬.৩২ শতাংশ এবং মানবিকে মাত্র ৫৩.৪৭ শতাংশ। মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা গণিতেই সবচেয়ে বেশি খারাপ করেছে।

এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৬ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী ফেল করেছে। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা বেশি। মোট ৯ লাখ ৫১ হাজার ৬৯৭ জন ছেলে পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৮১ জন। অন্যদিকে, ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩৮৯ জন মেয়ে পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪৫ জন। সব মিলিয়ে এবার ৬ লাখ ৬৬০ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে।

এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থী, যা গত বছরের ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম। জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ছাত্রী ৭৩ হাজার ৬১৬ জন এবং ছাত্র ৬৫ হাজার ৪১৬ জন।

সার্বিক ফল খারাপ হলেও, এবারও এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে। মেয়েদের পাসের হার ৭১.০৩ শতাংশ এবং ছেলেদের ৬৫.৮৮ শতাংশ। গত বছর মেয়েদের পাসের হার ছিল ৮৪.৪৭ শতাংশ এবং ছেলেদের ৮১.৫৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যেও মেয়েরা এগিয়ে।

চলতি বছর দেশের ১৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি, যা গত বছর ছিল ৫১টি। একইসঙ্গে, শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। এবার মোট ৯৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছে, যা গত বছর ছিল ২ হাজার ৯৬৮টি।

পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড, যেখানে ৭৭.৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। অন্যদিকে, সর্বনিম্ন পাসের হার বরিশাল বোর্ডে, ৫৬.৩৮ শতাংশ। বরিশালের চেয়ে সামান্য বেশি পাস করেছে ময়মনসিংহ বোর্ডে, ৫৮.২২ শতাংশ।

জিপিএ-৫-এ যথারীতি সবার ওপরে রয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা, যাদের ৩৭ হাজার ৬৮ জন শিক্ষার্থী পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে।

ফলাফলের সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, করোনাসহ নানা কারণে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় শিখন ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে। এসবের প্রভাব পড়েছে ফলাফলে। এই ফল বিশ্লেষণের জন্য একটি কমিটি করা প্রয়োজন।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে