ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ভূমিকম্পের এক্সক্লুসিভ রিপোর্টে সব তথ্য প্রকাশ

২০২৫ এপ্রিল ২৮ ১১:১৭:৪১
ভূমিকম্পের এক্সক্লুসিভ রিপোর্টে সব তথ্য প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও আশপাশের অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্পের প্রবণতা বাড়ায় একে বড় ভূমিকম্পের বার্তা মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশ বা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।সম্প্রতি‘তুরস্কের চেয়েও ভয়াবহ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে বাংলাদেশ’, ‘চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা উচ্চ ঝুঁকিতে’, কিংবা 'তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে দেশ' — এমন শিরোনাম সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রপত্রিকা এবং টেলিভিশন মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি সংবাদেই যেন আতঙ্কের রঙ মেশানো।

প্রশ্ন উঠছে, আসলেই কি বাংলাদেশে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে? বেশি ভাগ ভূতত্ত্ববিদই মনে করছেন, বাংলাদেশে ৭ কিংবা ৭.৫ মাত্রার বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু যদি দেশের শীর্ষ মিডিয়ার শিরোনামগুলোর দিকে তাকানো হয়, দেখা যায়—তাতে বলা হচ্ছে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকা সহ দেশের কয়েকটি শহর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। জরিপের তথ্য বলছে, এই ধরনের পূর্বাভাস বাস্তবতার তুলনায় অনেক বেশি আতঙ্ক ছড়ানোর প্রবণতা।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) ভূতত্ত্ববিদ মৌসুমী আক্তার এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ। প্রতিবছর সেডিমেন্ট জমে আসছে। যে কারণে ভূমিকম্প হলে ভূ-অভ্যন্তরের কোনো ফাটল বা স্ট্রেস ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত আসতে আসতে ক্ষমতা কমে যাবে কারণ অনেক সেডিমেন্ট ভেদ করে আসতে হবে।ভূতত্ত্ববিদ আনামুল হক ব্যাখ্যা করেন, বাংলাদেশের বেঙ্গল বেসিন একটি সেডিমেন্টারি বেসিন। এখানে অবস্থিত বেশিরভাগ ফল্ট বা ভূচ্যুতি তুলনামূলকভাবে কম গভীর এবং বহু বছর ধরে সেকেন্ডারি ইনফিলট্রেশনের মাধ্যমে পূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে এসব ফল্ট থেকে উৎপন্ন ভূমিকম্পের মাত্রা সাধারণত ৫ এর বেশি হয় না।

একইভাবে, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ (জিএসবি)-এর উপপরিচালক ড. মো. বজলুর রশীদ মনে করেন, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় স্বস্তির কারণ হলো—এ দেশের প্রধান ফল্ট লাইনগুলো মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে। যেমন, হিমালয়ান মেগা-থ্রাস্ট, ডাউকি ফল্ট বা স্যাগাইং ফল্ট—সবই বাংলাদেশের বাইরে অবস্থিত। সম্প্রতি মিয়ানমারের স্যাগাইং ফল্টে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলেও বাংলাদেশে বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ এসব ফল্ট থেকে শক্তির প্রক্ষেপণ বাংলাদেশের দিকে নয়, বরং উত্তর-দক্ষিণ দিক বরাবর হয়ে থাকে।ডেটা প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম, যিনি ভূমিকম্প গবেষণায় কাজ করেন, জানান—বাংলাদেশে মূল ভূখণ্ডে এনার্জি স্টোর হওয়ার সুযোগই কম।

বেঙ্গল বেসিনের ভৌগোলিক গঠনের কারণে একটি ফল্ট লাইনে শক্তি জমার আগে অন্য ফল্ট থেকে তা বেরিয়ে যায়। ফলে আশপাশের দেশে বড় ভূমিকম্প হলেও, বাংলাদেশে তা অনেক কমমাত্রায় অনুভূত হয়।তবে ভূতত্ত্ববিদদের মধ্যে সম্পূর্ণ ভিন্নমতও রয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাস্ট) পিএমই বিভাগের প্রধান ড. শফিকুল ইসলাম মনে করেন, অতীতে ১৮৯৭ সালের গ্রেট আসাম ভূমিকম্প, ১৯১৮ এবং ১৯৫০ সালের বড় ভূমিকম্পগুলোর নজির রয়েছে। এসব ঘটনা দেখিয়ে দেয়, এ অঞ্চলে ভূমিকম্পের সক্রিয়তা একেবারে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বিশেষ করে ডাউকি ফল্ট এবং কিছু সেকেন্ডারি ফল্ট এখনো প্রচুর টেকটোনিক শক্তি ধারণ করে রেখেছে।

এছাড়া ঢাকার মতো শহর যেখানে মাটির গঠন দুর্বল ও নরম অ্যালুভিয়াল সেডিমেন্টে তৈরি, সেখানে ভূমিকম্পের ক্ষতিকর প্রভাব অনেকগুণ বেড়ে যেতে পারে।যদিও ভূতত্ত্ববিদদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে, তবে একটি বিষয়ে সবাই একমত—বাংলাদেশের অবকাঠামোগত অনিয়ম বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ এর কম হলেও যদি বিল্ডিং কোড না মানা হয়, দুর্বল নির্মাণকাজ চলতে থাকে, তবে মানবসৃষ্ট দুর্বলতা থেকেই বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।ড. শফিকুল ইসলাম মনে করেন, ভবিষ্যতের ঝুঁকি কমাতে জরুরি কিছু পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে।

যেমন—সিসমিক রেটিং ভিত্তিক বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে প্রয়োগ, ভূগর্ভস্থ ডেটাবেস আপডেট করে ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিরূপণ, ভূমিকম্প সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ, নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া চালু এবং জিপিএস ও ইনসার ডেটা দিয়ে ভূমিকম্পের স্ট্রেইন মনিটরিং।সবমিলিয়ে ভূতত্ত্ববিদদের পরামর্শ-পৃথিবীতে ভূমিকম্প রোধ করা সম্ভব নয়, কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা, নীতিমালা ও সচেতনতা দিয়ে প্রাণ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। আতঙ্ক নয়, চাই বাস্তবতাভিত্তিক প্রস্তুতি।

মুয়াজ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে