ঢাকা, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫
Sharenews24

টাকা পাচারের অভিযোগে ৮ আ.লীগ ব্যবসায়ী গ্রুপের নাম

২০২৫ মার্চ ২৮ ০৯:৫০:৫৯
টাকা পাচারের অভিযোগে ৮ আ.লীগ ব্যবসায়ী গ্রুপের নাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে ব্যাপক পরিমাণ টাকা পাচারের তথ্য উঠে এসেছে। এই টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ৮টি বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের মাধ্যমে।

গ্রুপগুলো:

সামিট গ্রুপ

জেমকম গ্রুপ

এস আলম গ্রুপ

সিকদার গ্রুপ

ওরিয়ন গ্রুপ

আরামিট গ্রুপ

নাসা গ্রুপ

বেক্সিমকো গ্রুপ

এই গ্রুপগুলোর মাধ্যমে টাকা পাচার হয়ে যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সাইপ্রাস, কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, আইল অব ম্যানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

পাচারের মাধ্যমে সৃষ্ট সাম্রাজ্য

এই টাকা পাচারের মাধ্যমে বিদেশে বড় বড় সম্পত্তি গড়ে তোলা হলেও বাংলাদেশ থেকে এর কোনো লাভ পাওয়া যায়নি। বরং এসব লুটে করা টাকায় বিশাল ব্যবসা সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে। গ্রুপগুলোর মালিকরা বিভিন্ন দেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন এবং এসব তথ্য দেশের মধ্যে গোপন রাখা হয়েছে।

গোয়েন্দা তদন্তে উদঘাটিত তথ্য

সম্প্রতি একাধিক দেশি-বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে এসব পাচারের ভয়ংকর তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষ করে ব্যাংক লুট, সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ও রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়টি সামনে এসেছে। এ ছাড়াও, বেশ কয়েকটি অন্য গ্রুপের নামে টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে, যা নিয়ে বিশদ তদন্ত চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব সম্পদ উদ্ধারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

সামিট গ্রুপের অনিয়ম

সামিট গ্রুপের বিরুদ্ধে দেশের বিদ্যুৎ ও বন্দর খাতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এই গ্রুপটির মালিকানা একজন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ মন্ত্রীর ভাইয়ের হাতে। যদিও সেই মন্ত্রী এই গ্রুপের পরিচালক বা মালিকানায় নেই, তবুও অভিযোগ রয়েছে যে সরকারিভাবে অবৈধ সুবিধা নেওয়া হয়েছে। সামিট গ্রুপের সিঙ্গাপুর ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে বিভিন্ন সম্পত্তির সন্ধান মিলেছে।

জেমকম গ্রুপের পাচার

জেমকম গ্রুপের নামেও সিঙ্গাপুর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে, এবং তাদের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত চলছে। বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নিয়েও এই তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

এস আলম গ্রুপের পাচার

এস আলম গ্রুপের বিষয়ে ৯টি গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, এবং এতে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা পাওয়া গেছে। সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস, কানাডা ও মালয়েশিয়ায় গ্রুপটির বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া, সিঙ্গাপুরে একাধিক পাঁচ তারকা হোটেল ও ট্রেডিং কোম্পানি গঠন করা হয়েছে, যা দেশ থেকে পাচার করা টাকার মাধ্যমে গড়ে উঠেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিকদার গ্রুপের অবৈধ লেনদেন

সিকদার গ্রুপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে গ্রুপটির বিভিন্ন সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। তদন্ত চলছে।

ওরিয়ন গ্রুপের টাকাপাচার

ওরিয়ন গ্রুপও দেশ থেকে টাকা পাচার করেছে এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেছে। বিশেষত, আলবেনিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাদের বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে।

আরামিট গ্রুপ ও নাসা গ্রুপের বিনিয়োগ

আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের নামেও চার দেশে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গেছে। নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে ঋণের টাকার বড় অংশ বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে, এবং তাদের নামে যুক্তরাজ্য, হংকং, আইল অব ম্যান ও জার্সিতে বিপুল সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে।

বেক্সিমকো গ্রুপের পাচার

বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার মাধ্যমে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। লন্ডনে গ্রুপের মালিকের ছেলে ও ভাতিজার নামে বিলাসবহুল সম্পত্তি রয়েছে, যা তদন্তের আওতায় এসেছে।

বিদেশে সম্পদ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

তদন্তকারী সংস্থাগুলো বিদেশে এসব পাচার করা সম্পদ উদ্ধার করতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) তৈরি করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে, যা সম্পদ উদ্ধারে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মুয়াজ/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে