ঢাকা, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫
Sharenews24

সেন্ট্রাল ফার্মার আর্থিক হিসাবে ১৩৬ কোটি টাকার গরমিল

২০২৫ মার্চ ২৮ ১৫:৩৩:১৬
সেন্ট্রাল ফার্মার আর্থিক হিসাবে ১৩৬ কোটি টাকার গরমিল

ডুয়া নিউজ: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের আর্থিক হিসাবে নানা অসংগতি ও গোঁজামিল পাওয়া গেছে।

কোম্পানিটির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে প্রদর্শন করা আয়, ব্যয়, মজুত পণ্য, সম্পদ, গ্রাহকের কাছে পাওয়া, স্থায়ী সম্পদ, কর প্রদান, অবণ্টিত ডিভিডেন্ড, ব্যাংক হিসাবসহ আরও অনেক বিষয়ের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

কোম্পানিটির নিরীক্ষকের মতে, সব মিলিয়ে কোম্পানিটির প্রায় ১৩৬ কোটি টাকার হিসাব গরমিল রয়েছে। ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত ওষুধ কোম্পানিটি বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বর্তমানে আর্থিকভাবে পঙ্গু হতে বসেছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ি, কোম্পানিটির দাখিল করা আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লিখিত আয়, ব্যয়, গ্রাহকের কাছে পাওনা, স্থায়ী সম্পদ, অবণ্টিত লভ্যাংশ, ট্যাক্স প্রদান, ব্যাংক হিসাবের তথ্য, ডেফার্ড ট্যাক্সসহ আরও অনেক বিষয়ের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০০৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছে ৯৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা আয়কর দাবি করে ২০২২ সালের ১৫ মার্চ চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু কোম্পানিটি এর বিপরীতে মাত্র ২৮ কোটি ৪ লাখ টাকার প্রভিশনিং করেছে। বাকি ৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকার বিপরীতে কোনো প্রভিশনিং করেনি। এর মাধ্যমে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকার সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে।

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে জনতা ব্যাংক থেকে ২৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ঋণ উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২২ সালের জুনের আগে থেকেই কোম্পানিটি ঋণের এই পরিমাণ প্রতিবেদন করছে, কিন্তু গত কয়েক বছরে ঋণের কোনো পরিবর্তন হয়নি। নিরীক্ষকরা বিষয়টি তদন্ত করতে চাইলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি এবং কোম্পানি কর্তৃপক্ষও ঋণের তথ্য সম্পর্কে যথাযথ প্রমাণ দিতে পারেনি।

এছাড়া, কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো কিস্তি পরিশোধ করা হয়নি এবং সুদের বিপরীতে কোনো নিরাপত্তা সঞ্চিতিও রাখা হয়নি। এ কারণে কোম্পানিটির ঋণ সম্পর্কিত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি বলে মন্তব্য করেছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কোম্পানিটি তার গ্রাহকদের কাছে ৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা পাওনা উল্লেখ করেছে, তবে এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত প্রমাণাদি সরবরাহ করতে পারেনি। দীর্ঘদিন ধরে এই ঋণ দেখানো হচ্ছে। কিন্তু নিরীক্ষক এর আদায়ের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, স্পেয়ার পার্টস অ্যান্ড সাপ্লাইস হিসেবে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকার কোনও প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি, যা দীর্ঘদিন ধরে সম্পদ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো প্রভিশনিং করেনি। ফলে তারা সম্পদ বেশি দেখাচ্ছে।

নিরীক্ষক অভিযোগ করেছেন, কোম্পানিটি অধিকাংশ লেনদেন নগদে করে, যার ফলে লেনদেনের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। নগদ লেনদেনের মাধ্যমে আয়ের পরিমাণ বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ রয়েছে।

কোম্পানির অগ্রিম প্রদানের হিসাবেও ২৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার সম্পদ দেখানো হয়েছে, যার মধ্যে ২৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা অগ্রিম আয়কর প্রদান হিসেবে উল্লেখ আছে। তবে এ সম্পর্কে কোনো প্রমাণাদি প্রদান করতে পারেনি সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস।

একই সঙ্গে কোম্পানিটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ফি জমা দেয়নি।

২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে আসা কোম্পানিতে এখনও আইপিও আবেদনকারীদের ৬০ লাখ টাকা পড়ে আছে। এছাড়া কোম্পানিটির ৯ লাখ টাকার অবণ্টিত ডিভিডেন্ড রয়েছে। কিন্তু এই অর্থ বিএসইসির ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে স্থানান্তর করা হয়নি।

উদ্যোক্তা পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী, কোম্পানির মোট শেয়ারের ৩০ শতাংশ ধারণ করতে হবে। তবে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের উদ্যোক্তা পরিচালকরা মাত্র ৭.৬৭ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন। এর ফলে কোম্পানিটির ব্যবসায় ঝুঁকির সম্ভাবনা বেড়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ কমে গেলে তারা কোম্পানির ব্যবসায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

কোম্পানির ব্যবসায়িক অবস্থা

২০১৩ সালে শেয়াবাজারে তালিকাভুক্ত সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের অনুমোদিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১১৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির ১১ কোটি ৯৮ লাখ ৮৪৪টি শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৭.৬৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১০.৫১ শতাংশ, বাকি ৮১.৮২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার জেড ক্যাটেগরিতে বা জাঙ্ক ক্যাটেগরিতে লেনদেন হচ্ছে।

সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস সবশেষ ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। এরপর থেকে ২০২০, ২০২১, ২০২২, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।

সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-ডিসেম্বর’২৪) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৬ পয়সা। গত বছর একই সময়ে এই লোকসান ছিল ১৫ পয়সা।

আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৮৯ পয়সায়। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৭ টাকা ৬ পয়সা।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে