ঢাকা, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারে দ্বৈত কর: বিনিয়োগকারীদের জন্য বিপদ না সুযোগ

২০২৫ মার্চ ২২ ১৬:০৫:৪৫
শেয়ারবাজারে দ্বৈত কর: বিনিয়োগকারীদের জন্য বিপদ না সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের কর-রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে চেষ্টা করছে, তাতে নতুন কর আরোপের চেষ্টা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে একটি বড় বিষয় হলো ডিভিডেন্ড আয়ে ফের নতুন করে কর আরোপ করা, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলুন, বিস্তারিত জানি কেন এই বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

কোনো কোম্পানি যখন শেয়ারহোল্ডারদের ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে, তখন ওই ডিভিডেন্ডের ওপর বর্তমানে ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়। যদি শেয়ারহোল্ডারের টিআইএন নম্বর থাকে, তবে ১০ শতাংশ, না থাকলে ১৫ শতাংশ কর্তন করা হয়। যদি শেয়ারহোল্ডার কোনো প্রতিষ্ঠান বা কর্পোরেট হয়, তবে ২০ শতাংশ কর কর্তন করা হয়। তবে, এই আয়টি শেয়ারহোল্ডারের কোম্পানির কর-পরবর্তী আয়ের ওপর হয়। অর্থাৎ, শেয়ারহোল্ডারের কোম্পানি যখন সরকারকে কর দেয়, তার ওপর ফের কর বসানো হচ্ছে।

এই প্রথা বিশ্বের অনেক দেশে বিদ্যমান থাকলেও, সেখানে এই করের হার তুলনামূলকভাবে কম রাখা হয়। উদাহরণস্বরূপ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকংসহ বেশ কয়েকটি দেশে ডিভিডেন্ড আয়ে কোনো কর নেই, কারণ কোম্পানির পর্যায়ে ইতোমধ্যে কর প্রদান করা হয়েছে। পাকিস্তান, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশে ডিভিডেন্ড আয়ে নির্দিষ্ট হারে কর আরোপ করা হয়, যা পরে শেয়ারহোল্ডারের আয়কর রিটার্নের সাথে একত্রিত করা হয় না।

বাংলাদেশে ডিভিডেন্ড আয়ের ওপর দু'বার কর আরোপ করা হয়। একবার কোম্পানির লাভের ওপর এবং পরে শেয়ারহোল্ডারের ডিভিডেন্ড আয়ের ওপর। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা আসলে নিজেদের প্রকৃত আয় থেকে অনেক কম পেয়ে থাকেন, যা শেয়ারবাজারের জন্য ক্ষতিকর।

বাংলাদেশে কর আরোপের অতিরিক্ত চাপ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমিয়ে দেয়, যার ফলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ হ্রাস পায়। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় দ্বৈত কর পরিহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তবে সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। অতিরিক্ত কর আরোপের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য শ্লথ হতে পারে এবং সরকার সম্ভাব্য রাজস্ব হারাতে পারে।

দ্বৈত কর পরিহার করা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শেয়ারবাজারের গভীরতা বাড়াতে হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে পেতে হবে। তাই সরকারের উচিত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সহায়ক এবং প্রতিযোগিতামূলক করনীতি প্রণয়ন করা। এমনকি, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী নির্ভয়ে বিনিয়োগ করতে পারলে সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এখনো উন্নয়নশীল এবং এটি দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু ডিভিডেন্ড আয়ে দ্বৈত কর আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই, সরকারের উচিত শেয়ারবাজারের উন্নয়নে কার্যকর নীতি গ্রহণ করা, যাতে বিনিয়োগকারীরা সঠিক পথে বিনিয়োগ করতে পারেন এবং দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে