ঢাকা, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫
Sharenews24

মাগুরার শিশুটির পরিবারের  বর্তমান অবস্থা

২০২৫ মার্চ ১৬ ১০:০৫:২০
মাগুরার শিশুটির পরিবারের  বর্তমান অবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় আট দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যাওয়া মাগুরার আট বছর বয়সী শিশুটির বাড়িতে এখনো শোকের ছায়া। প্রতিদিন নানা মতের-দলের মানুষ এই বাড়িতে এসে শিশুটির বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, তাদের কেউ কেউ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

গতকাল শনিবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান জেলার শ্রীপুর উপজেলায় শিশুটির বাড়িতে গিয়েছেন। তিনি ওই বাড়িতে গিয়ে শিশুটির মৃত্যুর ঘটনার দ্রুত বিচার চান।বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল এসেও পরিবারটিকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে। শিশুটির ধর্ষকদের বিচার ৯০ দিনে নয়, বরং সাত দিনের মধ্যে করার দাবি জানান তিনি।

নিহত শিশুটির মামা ইউসুফ বিশ্বাস বলেন, শিশুটির বাবা মস্তিষ্কের এক সমস্যায় ভুগছেন। নিহত শিশুটি ছাড়া তার আরো দুইটি মেয়ে আর এক ছেলে রয়েছে।

বড় বোনকেই শুধু বিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বাকিরা ছোট। পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় এখন তাদের মা-ই কোনোভাবে সংসারের খরচ চালাতেন। তবে এখন অনেকেই পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করছে। তিনি বলেন, সবাই বিচার চায়, সাহায্য করছে।কিন্তু মেয়েকে তো আর পাবো না আমরা।শিশুটির ছোট চাচী আখি খাতুনের বাড়ি শিশুটির বাড়ি থেকে দুই মিনিট হাঁটা দূরত্বে। তিনি বলেন, সবাই যতটুকু পারে, সাহায্য দিচ্ছে। বিচার চাচ্ছে। তার মা কান্নাকাটি করছে, মানুষ বাড়িতে আসছে-যাচ্ছে, স্বান্ত্বনা দিচ্ছে।

কিন্তু মেয়েটির বাবা যেহেতু কিছু মনে রাখতে পারে না, তাই তিনি জানেনই না যে মেয়েটি কোথায় গেছে। কথা কথায় আখি খাতুন আরো বলেন, শিশুটির বাবা মানুষ দেখে ভয় পাচ্ছেন। সকালবেলা দেখলাম মাঠ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ডেকে খেতে দিলাম...অবুঝ শিশুর মতো পালতে হচ্ছে তাকে। ঢাকায় আনা নেওয়া, এত মানুষ, এই সমস্ত দেখে তিনি আরো বেশি ভয় পাচ্ছেন।

গত কয়েকদিন ধরে তারা মোবাইল কিংবা টিভি দেখার সময়ও পাননি জানিয়ে তিনি আরো জানান, শিশুটির বোনকে আর শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হবে না।

জারিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য রূপ কুমার মণ্ডল বলেন, বড় বোন হয়তো আর শ্বশুরবাড়িতে যাবে না। এই পরিবেশে কেউ যেতে পারে না। আর বিয়ে হয়েছেও তিন-চার মাস হলো। মেয়েটিকে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে শোক আর একটা থমথমে পরিবেশ রয়েছে।

এদিকে শিশুটির মৃত্যুর পর গত ১৩ মার্চ রাতেই ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার আসামিদের বাড়িতে, যা তার বোনেরও শ্বশুরবাড়ি, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায় এলাকাবাসী।

স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাড়িতে এখন ভাঙা দেয়াল ছাড়া অবশিষ্ট আর কিছু নাই এবং ওই এলাকায় এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা বলেন, এই এলাকায় অতীতে এমন ঘটনা ঘটেনি। এটি আমাদের অসম্মানিত করেছে। এখানে ধর্ষকের কোনো ঠাঁই হবে না।

মাগুরা সদর উপজেলায় গত ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় এলাকায় মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়েছে এবং বিক্ষোভকারীরা দোষীদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকর চেয়েছে বলে জানা গেছে।

এই ঘটনায় গত ৮ মার্চ আট বছরের শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় চার জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তবে তারা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। কিন্তু মামলার পর তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তুলে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

মামলার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে মাগুরা সদর থানার ইন্সপেক্টর ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, কেউ যদি ধর্ষণের পর হত্যার চেষ্টা করে বা এখন যেহেতু মারা গেছে, তাই নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে হত্যা সংক্রান্ত যে বিধান আছে, সে অনুযায়ী বিচার চলবে। সেভাবেই চার্জশিট দেওয়া হবে। যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে