ঢাকা, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

ব্যাংক খাতে বড় ধাক্কা, গভর্নর আহসান মনসুরের সতর্ক বার্তা

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ০৮ ১১:২৫:৩০
ব্যাংক খাতে বড় ধাক্কা, গভর্নর আহসান মনসুরের সতর্ক বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে এক ভয়াবহ চিত্র, যেখানে তিনি জানালেন দেশের ব্যাংক খাত থেকে ২.৫ লাখ কোটি টাকার মতো টাকা লুট হয়ে গেছে। এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপসহ আরও বিভিন্ন বড় ব্যবসায়ীরা ঋণের নামে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলেছে, যার জন্য রাজনৈতিক প্রভাব এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের দায় রয়েছে।

এটি একটি রাজনৈতিক ঋণ বিতরণের পরিণতি, যা পরবর্তীতে দেশের ব্যাংক খাতের সংকটে পরিণত হয়েছে। গভর্নর বলেন, "এখানে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়নি, রাজনৈতিক তৎপরতাও এতে জড়িত।" এই বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট হয়ে যাওয়ার পর, দেশের ব্যাংক খাতের সুস্থতা ফেরাতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন, কীভাবে এই ক্ষত সারানো হবে?

গভর্নর জানান, ১৮% খেলাপি ঋণ বর্তমানে ৩৫%-এ পৌঁছাতে পারে এবং আগামী বছরগুলিতে ব্যাংক খাতে আরও বড় চ্যালেঞ্জ আসবে। তবে তিনি আশাবাদী যে, ব্যাংক রেজল্যুশন আইন এবং ব্যাংক খাতের সংস্কারের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, "আমরা ৪-৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলবো।" তার মতে, ব্যাংক খাতে যা ঘটেছে তা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সেই লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।

এছাড়া, "ব্যাংক খাতের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে ব্যাংক রেজল্যুশন আইন খুব শীঘ্রই কার্যকর হবে," বলে জানান গভর্নর। এর মাধ্যমে, ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান যাচাইয়ের পাশাপাশি ফরেনসিক অডিটও চলবে, যাতে লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়। তিনি বলেন, "আমরা সবকিছু স্বচ্ছতার সঙ্গে করব, যাতে একদম সর্বশেষ ঘটনা নিয়ে সাধারণ মানুষও বিশ্বাস রাখতে পারে।"

তবে ব্যাংক খাতের মূলধন নেই—এমন ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে? গভর্নর বলেন, "এতগুলো ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। কিছু ব্যাংককে একীভূত করা, অধিগ্রহণ করা বা অবসায়ন করা হতে পারে।" এর পাশাপাশি, বিদেশ থেকে মূলধন এনে ব্যাংকগুলোর পুঁজি মজবুত করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

গভর্নর আরও বলেন, "আমরা ২০২৬ সালের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৫%-এর নিচে নামিয়ে আনবো এবং ব্যাংক খাতের আস্থা ফিরিয়ে আনবো।"

ব্যাংক লুট বন্ধ হয়ে গেছে, তবে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে কতটা সময় লাগবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। "এটা কী শুধু সময়ের ব্যাপার, নাকি গভীর সংস্কারের প্রয়োজনে আরও বড় পদক্ষেপ প্রয়োজন?"—এই প্রশ্ন দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে।

গভর্নরের সতর্ক বার্তা: "যাদের ব্যাংক খাতে সমস্যা রয়েছে, তাদের সাহায্য করতে হবে, কিন্তু যাদের বাঁচার সামর্থ্য নেই, তাদের নতুন করে টাকা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই।"

এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের ব্যাংক খাত এখন এক নতুন সংকটের মধ্যে রয়েছে, এবং সে সংকট কাটানোর জন্য গভর্নরের সংকল্প ও দেশের অর্থনীতির শাসকগোষ্ঠীর কৌশল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

মাহমুদা/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে