ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

নানা দুর্ভোগের পর গ্রিসে বাংলাদেশি প্রবাসীদের মুখে তৃপ্তির হাসি

২০২৩ ডিসেম্বর ২৪ ১৬:৫৬:১৮
নানা দুর্ভোগের পর গ্রিসে বাংলাদেশি প্রবাসীদের মুখে তৃপ্তির হাসি

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘদিন মানবেতর জীবনযাপনের পর সুখের দেখা পেলেন গ্রিসে বসবাসরত অনিয়মিত বাংলাদেশিরা। গ্রিক পুলিশ কর্তৃক অনিয়মিত অভিবাসী আটক অভিযান শুরুর পর থেকে অনেকটা গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলেন তারা। এথেন্সে প্রতিদিনই চলছিল অনিয়মিতদের ধরপাকড়। এর মধ্যে বাংলাদেশিদেরই বেশি টার্গেট করা হচ্ছিল।

অনিয়মিত অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতেও তোড়জোর শুরু করে গ্রিক সরকার। কয়েক দফায় প্রায় অর্ধশতাধিক বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর ঘটনায় আতংক বিরাজ করে অভিবাসীদের মাঝে। এছাড়াও বাংলাদেশিদের বাসায় চুরি, রাস্তায় প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও কোন বিচার পাচ্ছিলেন না অনিয়মিত বাংলাদেশিরা। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় থানায় যাওয়া কিংবা অভিযোগ করার সাহস পাননি এসব অনিয়মিত বাংলাদেশিরা।

অবশেষে দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গ্রিস ও বাংলাদেশের সমঝোতা চুক্তি বাস্তবায়নের পর এবার অনেকটা সুখেই আছেন বাংলাদেশিরা। কেউ কেউ আবার দেশে এসেও ঘুরে যাচ্ছেন। অনেকেই দেশে অবস্থান করছেন, সময় কাটাচ্ছেন পরিবারের সাথে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১.৫ গুন। অন্যদিকে, গ্রীক কৃষিখামারের সঙ্গে জড়িত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক দেশটির পশ্চিম মানোলাদায় বাস করেন। মূলত স্ট্রবেরি ও জয়তুন, মাল্টাসহ কৃষির বিভিন্ন খামারেই তাদের কাজ। গ্রিসে বসবাসরত শ্রমিকগণ গ্রিস ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন।

শুধু তাই নয়, কোভিড মহামারির মধ্যেও তারা কঠোর পরিশ্রম করে গ্রিসের কৃষিতে অবদান রাখছেন। বৈধ সনদপত্র না থাকায় সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন তারা। অসুস্থ হলে পাচ্ছিলেন না চিকিৎসা সেবাও। এভাবেই নানা আতংক, হতাশা আর দুঃখ কষ্টে দিন কাটছিল প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের। গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সফর করেন গ্রিক অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি। এসময় তার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

চুক্তি অনুযায়ী- ইউরোপের দেশ গ্রিসে প্রতি বছরে ৪ হাজার করে বাংলাদেশি কর্মীকে মৌসুমী কাজের ভিসা দেয়া হবে এবং গ্রিসে বসবাসরত ১৫ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশিকে ৫ বছরের জন্য অস্থায়ী বৈধতার আওতায় আনা হবে। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই বৈধতা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করে গ্রিক সরকার।

২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারী থেকে চালু করা হয় আবেদন করার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। এরপর ধাপে ধাপে রেসিডেন্স পারমিট দেওয়া শুরু করে দেশটি। ইতিমধ্যে দেশটিতে বসবাসরত সিংহভাগ অনিয়মিত বাংলাদেশি বৈধ বসবাস করছেন। প্রথমদিকে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন কারখানা ও খামারে দাসের মতো রাখা হতো। তবে এখন আর কারো দাস নয়, এবার তারা স্বাধীন মতো চাকরি করছেন দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। পাচ্ছেন সব ধরনের সুযোগ সুবিধা। অনেকেই নাড়ীর টানে ফিরেছেন নিজ দেশে। কেউ কেউ ১০ থেকে ১২ বছর যাবত অনিয়মিত অবস্থায় জীবন যাপনের পর বৈধ হয়ে দেশ থেকে ঘুরে গিয়েছেন। অনেকেই ছুটিতে আছেন বাংলাদেশে।

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৮৩৩ জন প্রথম ধাপে দূতাবাসে নিবন্ধন করেছেন। এদের অনেকেই দ্বিতীয় ধাপে আবেদন করে বৈধতার আওতায় এসেছেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধতার কার্যক্রম চলবে।

এদিকে বাংলাদেশিরা বৈধ হওয়ায় বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। দূতাবাস জানিয়েছে অনিয়মিতদের বৈধ করায় তারা এখন বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাচ্ছেন বাংলাদেশ। আগের তুলনায় প্রায় ১.৫ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ বলেন, আমাদের দূতাবাসের সুদীর্ঘ দুই বছরের কূটনৈতিক তৎপরতার ফলশ্রুতিতে অবশেষে আমরা সেই বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যকার যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল সেটার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন হয়েছে। যার ফলে এখানে আমাদের অনিয়মিতভাবে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছিলেন তাদের বৈধ হওয়ার একটা সুযোগ এসেছে।

আসুদ আহমদ জানান, সমঝোতা স্মারকের বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে এবং আইনের বিভিন্ন জটিলতা সব নিরসন হয়ে অবশেষে বৈধতার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, গ্রিসে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মিতভাবে অবস্থান করায় বাংলাদেশে যেতে পারছেন না, তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না, তারা কিন্তু রেসিডেন্ট কার্ড পেয়েই বাংলাদেশে অনেকেই চলে গেছেন দেশে। ঘুরেও এসেছেন অনেকেই।

শেয়ারনিউজ, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে