ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

বনসাই বিতর্ক, ডাস্টবিনে হাসিনা—সব প্রশ্নের জবাব দিলেন প্রেস সচিব

২০২৫ আগস্ট ১৪ ১০:৫৪:০৭
বনসাই বিতর্ক, ডাস্টবিনে হাসিনা—সব প্রশ্নের জবাব দিলেন প্রেস সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। এরপর মাত্র পাঁচ দিন পর, ১৩ আগস্ট শফিকুল আলমকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

গতকাল বুধবার (১৩ আগস্ট) প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্ণ করেন শফিকুল আলম। এ উপলক্ষে তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক খোলা মন ও ব্যক্তিগত আবেগে ভরা স্ট্যাটাসে এই এক বছরের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি তুলে ধরেন।

শফিকুল আলম লেখেন,“এটি ছিল এক অসাধারণ যাত্রা—একটি বিদেশি সংবাদ সংস্থার ব্যুরো চিফ থেকে দেশের প্রতিদিনের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসা। কাজটি শুরু করতে হয়েছে একেবারে গোড়া থেকে। আগে এই দায়িত্ব ছিল মূলত আনুষ্ঠানিক, এখন তা অনেক বেশি গতিশীল ও কৌশলগত।”

তিনি স্বীকার করেন, দায়িত্ব পালনে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, বিশেষ করে সময় ব্যবস্থাপনা নিয়ে।

“কখনো পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনে দেরিতে প্রতিক্রিয়া দিয়েছি, কখনোবা না বললেই ভালো হতো। এগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছি,”—বলেন তিনি।

শফিকুল আলম জানান, এই এক বছর তার পরিবার—স্ত্রী, সন্তান ও ভাইবোনদের জন্য সহজ ছিল না। দায়িত্বের চাপ ও নজরদারির কারণে তাদেরকেও অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে।

তিনি বলেন,“আমি কিছু বন্ধু হারিয়েছি, সাংবাদিক সমাজের কেউ কেউ প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। কেউ আমাকে ‘স্পিন ডাক্তার’ বলেছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, সত্যকে বিকৃত করিনি। সাদা মানে সাদা, কালো মানে কালো—এই নীতিতে চলেছি।”

সমালোচনার মুখে কিছু আলোচিত প্রশ্ন ও উত্তর

প্রেস সচিব হিসেবে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিতর্কে বারবার আলোচনায় এসেছেন শফিকুল আলম। তার স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন, গত এক বছরে যেসব প্রশ্ন ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার কিছু স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন:

হাসিনার ছবি ডাস্টবিনে ফেলা কি প্রয়োজন ছিল?

“হ্যাঁ, তিনি ছিলেন এক নির্মম স্বৈরশাসক। তার অবস্থান জনগণকে বোঝানো জরুরি ছিল।”

আপনি কি বামপন্থিদের 'বনসাই' বলেছিলেন?

“না, আমি বলেছিলাম তারা বাংলাদেশকে বনসাই আকারে রাখতে চায়।”

আপনার মেয়াদ শেষে রাজনীতিতে যোগ দেবেন কি?

“না, আমি সাংবাদিকতায় ফিরে যাব।”

আপনার উপর লন্ডনে হামলা হয়েছিল?

“না। চাথাম হাউজের বাইরে কিছু আওয়ামী সমর্থক চিৎকার করেছিল—এটা পশ্চিমা ধাঁচের প্রতিবাদ, সহিংস নয়।”

আপনি প্রেস সচিব না কি সরকারি মুখপাত্র?

“হোয়াইট হাউস মডেল অনুযায়ী, প্রেস সচিব একইসঙ্গে প্রেসিডেন্টের মুখপাত্রও হন।”

‘স্টারমার কানাডায়’ মন্তব্যটি কি ইচ্ছাকৃত ছিল?

“না, একজন ব্রিটিশ এমপির মন্তব্যের ভিত্তিতে ‘সম্ভবত’ বলেছিলাম। পরে বুঝি, তা বলা উচিত হয়নি।”

সরকার ও প্রেস উইং নিয়ে মূল্যায়ন

প্রেস সচিব হিসেবে শফিকুল আলম বলেন,“এই দায়িত্ব ছিল এক বিশাল শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা। চাপ অনুভব করিনি, তবে মনে হয়েছে যদি দিনে ৩৬ ঘণ্টা হতো!”

সরকারের কর্মপরিকল্পনা ও অগ্রগতি নিয়ে তিনি বলেন,“আমি সরকারকে A++ দেব। বড় সংস্কার হচ্ছে, বিচার প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে, সামনে লক্ষ্য অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।”

নিজের প্রেস উইং সম্পর্কে তিনি বলেন,“আমরা ভবিষ্যতের প্রেস উইংয়ের জন্য একটি উচ্চমানের মানদণ্ড তৈরি করেছি—একটি ট্রেইলব্লেজিং টিম।”

সবশেষে নিজের সবচেয়ে বড় ভয় সম্পর্কে তিনি লেখেন:“সরাসরি ব্রিফিং বা টক শোতে কোনো ভুল কথা বলে ফেলা—যেখানে সেই ভুল আর ফেরত নেওয়ার সুযোগ নেই। এটাই আমার সবচেয়ে বড় চিন্তা।”

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে