ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

দেশের ব্যাংকিং খাতে অন্যতম বড় ঋণ কেলেঙ্কারি

২০২৫ আগস্ট ১৪ ১২:০১:৩১
দেশের ব্যাংকিং খাতে অন্যতম বড় ঋণ কেলেঙ্কারি

নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজারের ঈদগড় ও বান্দরবানের বাইশারীর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অন্তত ২২ জন দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষের নামে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)-এর চট্টগ্রামের একটি শাখা থেকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ঋণ তুলে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।

ভুক্তভোগীদের একজন নুরুল ইসলাম—একজন দরিদ্র শ্রমজীবী। চ্যানেল ২৪-এর হাতে আসা নথি অনুযায়ী, তার নামে ইউসিবির চকবাজার শাখা থেকে ২১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ নেওয়া হয়েছে। অথচ তিনি নিজেই জানেন না, কীভাবে বা কখন তার নামে এই ঋণ অনুমোদিত হলো।

তিনি বলেন,“করোনার সময় বলেছিল সরকার থেকে চাল-ডালসহ সহায়তা দেবে। এনআইডি নিয়েছিল, আমি তো কোনো ব্যাংকে যাইনি। তাহলে এত টাকা ঋণ নিলাম কীভাবে?”

এমন ভুয়া ঋণের শিকার আরও অন্তত ২১ জন—যাদের বেশিরভাগই সাক্ষরজ্ঞানহীন, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষ। এমনকি একজন ভুক্তভোগী, মিজানুর রহমান, ব্যাংক থেকে একাধিক ঋণসংক্রান্ত নোটিশ পাওয়ার পর মানসিক চাপ ও স্ট্রোক করে মারা যান।

ভুক্তভোগীরা জানান, স্থানীয়ভাবে পরিচিত কিছু ব্যক্তি সহায়তার নাম করে এনআইডি সংগ্রহ করে তাদেরকে চট্টগ্রামের পটিয়ায় নিয়ে যান। সেখানে ইংরেজিতে লেখা কিছু ফর্মে তাদের স্বাক্ষর নেওয়া হয় এবং বিনিময়ে ২০-৪০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়ে গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এই চক্রের মূল খেলোয়াড় বলে অভিযুক্ত হচ্ছেন আবুল কালাম (ঈদগড়), মোস্তাফিজুর রহমান, শাহজাহান ও নুরুল আনোয়ার (পটিয়া)। এদের মধ্যে আবুল কালামের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রাই অনেক এনআইডি সংগ্রহের কাজে যুক্ত ছিলেন।

ব্যাংকের ভেতরে কীভাবে এত বড় অঙ্কের ঋণ মঞ্জুর হলো, সেই প্রশ্নে উঠেছে গুরুতর সন্দেহ। ভুক্তভোগীদের কখনও ব্যাংকে না গিয়েও কাগজে স্বাক্ষর, জমির দলিল, মর্টগেজ ও ব্যাংক যাচাইপূর্বক কীভাবে ঋণ মঞ্জুর হলো—তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইউসিবির চকবাজার শাখার প্রাক্তন অপারেশন ম্যানেজার হোসনে মোবারক জিকু ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হয়ে বলেন,“তারা জায়গা জমি দেখিয়েছে, সব ডকুমেন্ট ছিল বলেই ঋণ মঞ্জুর হয়।"

তবে আইনজীবীরা বলছেন, পুরো প্রক্রিয়াটিই ছিল ‘জালিয়াতির ক্লাসিক কেস’। অ্যাডভোকেট রমিজ আহমেদ বলেন,“প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে দুই পক্ষের যোগসাজশ ছাড়া এমন ঘটনা সম্ভব নয়। এটাই প্রমাণ করে এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত সংঘবদ্ধ প্রতারণা।”

অভিযোগ উঠেছে, ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে ঋণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা হতবাক। ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান বলেন,“যাদের দিন আনতে দিন খায়, তারা কোটি টাকা ঋণ নেবে কীভাবে? এই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।”

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে