ঢাকা, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারে থামছে না প্রতারণার জাল, অবাধে চলছে বিনিয়োগ কেলেঙ্কারি

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৮ ১৬:০১:২৭
শেয়ারবাজারে থামছে না প্রতারণার জাল, অবাধে চলছে বিনিয়োগ কেলেঙ্কারি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে শেয়ারবাজারে প্রতারণার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন সুপরিচিত বাজার বিশ্লেষক ও প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে এই চক্রগুলো বিনিয়োগকারীদের শত শত গুণ লাভের প্রলোভন দেখাচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর বারবার সতর্কবার্তা সত্ত্বেও এই প্রতারণা থামানো যাচ্ছে না।

প্রতারকরা মূলত ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মে চটকদার বিজ্ঞাপন দেয় এবং আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের হোয়াটসঅ্যাপ বা টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করে। এসব গ্রুপে তারা ভুয়া মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে বিনিয়োগের জন্য চাপ দেয়। একটি প্রতারকচক্র আরও একটি নতুন অ্যাপ চালুর ঘোষণা দিয়েছে, যা তাদের নির্বিঘ্নে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ারই প্রমাণ।

এই প্রতারণা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়ে বিএসইসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)-এর সহায়তা চেয়েছে। এনটিএমসি-এর দায়িত্ব হলো দেশের ইলেকট্রনিক যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করা। তবে এখনো পর্যন্ত এনটিএমসি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। ফলে প্রতারকরা এখনো অবাধে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতারকরা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে বিভিন্ন সংবেদনশীল প্রতীক ব্যবহার করছে। এর মধ্যে রয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জ, বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের লোগো ও ছবি।

এই ধরনের স্ক্যাম বাংলাদেশে নতুন হলেও বিদেশে এটি ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়েছে। এফবিআই-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে এই পদ্ধতিতে শত শত কোটি ডলার হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভারতেও ২০১৪ সালে ৫ বিলিয়ন রুপি চুরি হয়েছে। এছাড়া, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর ও নাইজেরিয়াতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

প্রতারকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে শত শত বিজ্ঞাপন তৈরি করছে, যেখানে বিনিয়োগের ওপর ৩০০ থেকে ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। প্রথমে বিনিয়োগকারীদের ছোট অঙ্কের অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে তারা আস্থা অর্জন করে। এরপর তাদের বড় অঙ্কের বিনিয়োগের জন্য চাপ দেওয়া হয়, জরুরি প্রস্তাব যেমন "শুধুমাত্র আজকের জন্য", "শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের জন্য বোনাস", অথবা "ভিআইপি এআই মডেল" ইত্যাদি প্রলোভন দেখিয়ে।

যখন বিনিয়োগকারীরা বড় অঙ্কের টাকা তুলতে চায়, তখন তাদের "ট্যাক্স", "যাচাই ফি" অথবা "ওয়ালেট আপগ্রেড ফি" দেওয়ার কথা বলা হয়। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর প্রতারকরা উধাও হয়ে যায়, সাধারণত ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা সরিয়ে ফেলে।

বিএসইসি বেশ কয়েক মাস আগেই এসব স্ক্যাম শনাক্ত করেছিল। এরপর ডিএসই একটি সংবাদ সম্মেলন করে এবং সতর্কবার্তা প্রকাশ করে। কিন্তু এসব প্রচেষ্টা কার্যকর হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসি-এর এক কর্মকর্তা জানান, "এই ধরনের প্রতারণা বন্ধ করার মতো প্রযুক্তি আমাদের কাছে নেই।"

বিএসইসি-এর মার্কেট ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্ট এনটিএমসি-কে চিঠি পাঠিয়েছে, যেখানে এআই ব্যবহার করে প্রতারণার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে এবং একটি নির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বন্ধ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে প্রতারকরা অসংখ্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এবং ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে, যার ফলে একটি গ্রুপ বন্ধ করে এই হুমকি পুরোপুরি দমন করা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যা মোকাবিলায় প্রযুক্তিভিত্তিক সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে