ঢাকা, সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

খেলাপি ঋণের চাপে ব্যাংক খাত, মুনাফা নেমেছে তলানিতে

২০২৫ আগস্ট ২৫ ০৭:২৯:৫১
খেলাপি ঋণের চাপে ব্যাংক খাত, মুনাফা নেমেছে তলানিতে

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৫) অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকিং খাত গভীর সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। খেলাপি ঋণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, মূলধনের ভিত্তি দুর্বল হচ্ছে এবং লাভজনকতা নেতিবাচক দিকে মোড় নিচ্ছে।

গত রোববার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে ব্যাংকিং খাতের কাঠামোগত দুর্বলতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে এবং সতর্ক করা হয়েছে যে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায়, ঋণ বিতরণ স্থবির হওয়ায় এবং মূলধনের ঘাটতি থাকায় এই খাত একটি 'সংকটময় মুহূর্তে' এসে পৌঁছেছে।

খেলাপি ঋণ এবং মূলধনের অবস্থা

২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ তীব্রভাবে বেড়েছে। মার্চ মাসের শেষে এর পরিমাণ ৪.২ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ডিসেম্বর ২০২৪-এ ছিল ৩.৪৫ লাখ কোটি টাকা। এর ফলে মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের অনুপাত ২০.২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৪.১৩ শতাংশ হয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোকে উচ্চতর প্রভিশন (সুরক্ষিত তহবিল) রাখতে হচ্ছে, যা তাদের মুনাফা মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিয়েছে।

ব্যাংকগুলোর মূলধনের ভিত্তিও উদ্বেগজনকভাবে দুর্বল হয়েছে। একটি ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতার প্রধান সূচক ক্যাপিটাল টু রিস্ক ওয়েটেড অ্যাসেটস রেশিও (সিআরএআর) মার্চ মাসে কমে মাত্র ৩.০৮ শতাংশ হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ব্যাসেল-৩ মানদণ্ডের তুলনায় অনেক কম। ডিসেম্বর মাসে এই অনুপাত ছিল ৬.৮৬%। এই পতন নির্দেশ করে যে, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি এবং দুর্বল মূলধন সরবরাহ ব্যাংকগুলোকে যৌথভাবে চাপে ফেলেছে।

মুনাফা এবং তারল্যের সংকট

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকগুলোর লাভজনকতা নেতিবাচক হয়েছে। প্রভিশন ও কর পরবর্তী নিট মুনাফা কমে যাওয়ায় রিটার্ন অন অ্যাসেটস (আরওএ) মাইনাস ০.১৮ শতাংশ এবং রিটার্ন অন ইক্যুইটি (আরওই) মাইনাস ৩.৯৯ শতাংশ হয়েছে, যা এক বছর আগে যথাক্রমে ০.২৩ শতাংশ এবং ৪.৩২ শতাংশ ছিল। এই লোকসানের প্রধান কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণের জন্য প্রভিশন ৭৬.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি এবং পরিচালন আয়ের হ্রাসকে দায়ী করা হয়েছে।

এদিকে, ব্যাংকের তারল্যের প্রধান উৎস আমানতের প্রবৃদ্ধি মার্চ ২০২৫-এ কমে ৮.৫১ শতাংশ হয়েছে, যা এক বছর আগে ছিল ৯.৯৮ শতাংশ। ঋণ বিতরণও ৮.২২ শতাংশে আটকে আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে যে, বিপুল খেলাপি ঋণ, সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর ওপর ঋণ বিতরণে নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, দুর্বল ব্যবসায়িক পরিবেশ এবং উচ্চ ঋণ গ্রহণের ব্যয়—এসবের সমন্বিত প্রভাবে ঋণ বিতরণ স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে, আমানত ও ঋণ বিতরণের এই স্থবিরতা দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

আস্থা সংকট ও সংস্কারের উদ্যোগ

প্রতিবেদনে আমানতকারীদের আস্থা কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য সহায়তা সত্ত্বেও, কিছু ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ সরবরাহ করতে হিমশিম খেয়েছে, যা গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। যদিও কিছু ব্যাংকের অবস্থা স্থিতিশীল হয়েছে, তবে অন্যগুলো এখনো চাপের মুখে রয়েছে।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে ঋণ শ্রেণীকরণ, প্রভিশন এবং ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম চালু করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সুশাসন এবং কাঠামোগত সংস্কার এখনো অগ্রাধিকার।" সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংক সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং কাঠামোগত সমস্যা সমাধানের জন্য আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।

তোহা/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে