ঢাকা, বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

এক দিনে ৩ শতাধিক ব্যাংক কর্মীকে ছাঁটাই

২০২৫ আগস্ট ২০ ১৭:১৬:০১
এক দিনে ৩ শতাধিক ব্যাংক কর্মীকে ছাঁটাই

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে রিটেইল ব্যাংকিং কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে একদিনেই তিন শতাধিক কর্মীকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দিয়েছে ব্যাংকটি। যারা ছাঁটাইয়ের তালিকায় পড়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে কর্মীরা হতভম্ব হয়ে পড়েছেন এবং পরিবার নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ চাকরি হারানো অনেকের জন্য নতুন করে চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীরা। গত ৩০ জুলাই এইচএসবিসি জানায়, তারা বাংলাদেশে তাদের খুচরা (রিটেইল) ব্যাংকিং সেবা বন্ধ করে দিচ্ছে। এই ঘোষণার কয়েক দিনের মাথায় একসঙ্গে তিন শতাধিক কর্মীকে ছাঁটাইয়ের খবর জানিয়ে দেওয়া হয়।

এইচএসবিসি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ঢাকায় তাদের ৪টি শাখা, চট্টগ্রামে ২টি এবং সারা দেশে মোট ৭টি শাখা-উপশাখা রয়েছে। রয়েছে ১১টি এটিএম বুথ ও ৫টি ‘সিলেক্ট’ সেন্টার। রিটেইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ব্যক্তি হিসাব, গৃহঋণ, গাড়ির ঋণ, বিমা, মেয়াদি বিনিয়োগ ও শরিয়াহভিত্তিক অর্থায়নের মতো সেবা প্রদান করত তারা। বর্তমানে এসব সেবায় নতুন গ্রাহক গ্রহণও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং বিদ্যমান গ্রাহকদের দ্রুত তাদের হিসাব বন্ধ করতে বলা হয়েছে।

২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ছিল প্রায় ২২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা এবং ঋণ ও অগ্রিম ছিল ১৮ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। ব্যাংকটি ঐ বছর ১ হাজার ৮৬ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা করে। সুদের আয় বৃদ্ধি, আমানতের খরচ কমা এবং বিনিয়োগ থেকে ভালো রিটার্নের কারণে এই মুনাফা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তা সত্ত্বেও হঠাৎ কেনো রিটেইল ব্যাংকিং গুটিয়ে নেওয়া হলো—তা নিয়ে গ্রাহক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এদিকে রিটেইল ব্যাংকিং বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ আমানতকারীরা। তবে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়বেন ঋণগ্রহীতারা এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ফাইল খোলা শিক্ষার্থীরা। কারণ মাঝপথে ব্যাংক বদল করা ঝামেলাপূর্ণ এবং সময়সাপেক্ষ। কেউ কেউ বলছেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

এইচএসবিসি অতীতেও একাধিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। করোনার পর ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে একসঙ্গে ১১৪টি শাখা বন্ধ করে দেয়, যার ফলে বহু কর্মী চাকরি হারান। এছাড়াও, বাংলাদেশে তাদের একটি শাখার মাধ্যমে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ একসময় আলোচনায় আসে।

ছাঁটাই হওয়া কর্মীরা জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ বিভিন্নজনকে বিভিন্ন ধরনের অফার দিচ্ছে। তবে যৌক্তিক সুযোগ-সুবিধা বা সম্মানজনক সমাধান না পাওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ। ধানমন্ডি শাখায় কর্মরত এক কর্মকর্তা বলেন,“আমাদের বলা হয়েছে ৩১ মার্চ আমাদের শেষ কর্মদিবস। চাইলে এর আগেও পদত্যাগ করতে পারি।”

তিনি আরও বলেন,“আমরা যেসব দাবি জানিয়েছি, কর্তৃপক্ষ তা মানতে নারাজ। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি-দাওয়া জানানো হবে।”

এই বিষয়ে জানতে চাইলে এইচএসবিসির জনসংযোগ বিভাগের নওরিন ইসলাম বলেন,“বিষয়গুলো ব্যাংকের গোপনীয়। এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়ার সুযোগ নেই।”

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে