ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে মেনে চলবেন যেসব নিয়ম

২০২৫ আগস্ট ১২ ১১:৩০:৪০
ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে মেনে চলবেন যেসব নিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্ষার মৌসুমে পানি জমে থাকা এবং বেড়ে যাওয়া আর্দ্রতা পানিবাহিত ও মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে এডিস ইজিপ্টাই মশার প্রজননের জন্য এই পরিবেশ আদর্শ হিসেবে কাজ করে, যার ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া সহ বিভিন্ন জটিল রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সময়মতো সতর্কতা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গুর প্রভাব প্রায়শই ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। সিলভারস্ট্রিক মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. বিকাশ বশিষ্ঠ ডেঙ্গু ও অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে ৬টি কার্যকর পরামর্শ দিয়েছেন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

স্থির পানি দূর করুন

অল্প পরিমাণ পানিও মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। তাই সপ্তাহে অন্তত একবার বালতি, কুলার, ফুলের টব, পাখির পানির পাত্র, পুরোনো টায়ার ইত্যাদি খালি ও পরিষ্কার করুন। পানি রাখার ট্যাংক ও পোষা প্রাণীর পানির বাটি ঢেকে রাখুন। ছাদ বা ড্রেনের জমে থাকা পানি পরিষ্কার করুন।

মশা প্রতিরোধক ব্যবহার করুন

ডিইইটি, পিকারিডিন বা লেমন ইউক্যালিপটাস অয়েল যুক্ত রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন, বিশেষ করে ভোরবেলা ও বিকেলের দিকে। শিশুদের জন্য নিরাপদ রোল-অন বা মশা প্রতিরোধক প্যাচ ব্যবহার করুন।

সুরক্ষামূলক পোশাক পরুন

ডেঙ্গু ও অন্যান্য মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে সঠিক ধরনের পোশাক নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে বের হওয়ার সময় এমন পোশাক পরা উচিত যা শরীরের যতটা সম্ভব অংশ ঢেকে রাখে যেমন লম্বা হাতার শার্ট, ফুল-লেংথ প্যান্ট, মোজা এবং বন্ধ জুতো। এতে মশা সরাসরি ত্বকে কামড়াতে পারে না। পোশাকের রঙও এখানে ভূমিকা রাখে; হালকা রঙের কাপড় ব্যবহার করা ভালো, কারণ গবেষণায় দেখা গেছে মশা গাঢ় রঙের দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়।

মশার জাল ও নেট ব্যবহার করুন

ডেঙ্গুর প্রধান বাহক এডিস ইজিপ্টি মশা মূলত দিনের বেলায় কামড়ায়। এদের থেকে সুরক্ষার অন্যতম কার্যকর উপায় হলো ঘরের ভেতরে মশার প্রবেশ রোধ করা, যার জন্য জানালা ও দরজায় মশার জাল বা স্ক্রিন লাগানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্ক্রিন এমনভাবে বসাতে হবে যাতে কোনো ফাঁক না থাকে এবং মশা ঢোকার সুযোগ না পায়। বাজারে পাওয়া সূক্ষ্ম জালের স্ক্রিন মশা, মাছি ও অন্যান্য ছোট পোকামাকড়ের প্রবেশ কার্যকরভাবে বন্ধ করে দেয়। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ইনসেক্টিসাইড-ট্রিট করা স্ক্রিন ব্যবহার করলে সুরক্ষা আরও বেড়ে যায়। এছাড়া ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা ডেঙ্গু প্রতিরোধে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত উপায়।মশারি সবসময় ভালোভাবে টানটান করে বিছানার চারপাশে বসাতে হবে, যাতে কোনো দিক দিয়ে মশা ঢুকতে না পারে।

ডেঙ্গুর লক্ষণ আগে থেকে চিনুন

ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো দ্রুত শনাক্ত করা খুবই জরুরি। সাধারণত ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে হঠাৎ উচ্চ জ্বর আসে যা প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, বিশেষ করে চোখের পেছনে ব্যথা অনুভূত হয়। পাশাপাশি পেশী ও জয়েন্টে তীব্র ব্যথা, শরীরে লাল র‍্যাশ, বমি বমি ভাব ও উদর ব্যথাও সাধারণ লক্ষণ। এই সব উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেলে ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে, আর দেরি করলে জীবনহানির আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই শরীরের কোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ অনুভূত হলে অবিলম্বে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।

সতর্ক থাকুন ও সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নিন

স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দেয়া নির্দেশনা মেনে চলুন। স্থানীয় ডেঙ্গু সতর্কতা সম্পর্কে আপডেট থাকুন। পাড়ায় বা এলাকায় একসঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নিন। ডেঙ্গু প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায় হলো সময়মতো সচেতন হওয়া ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপংয়া। শুধু ব্যক্তিগত নয়, সামষ্টিক উদ্যোগও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষার মৌসুমে স্থির পানি না রাখা, মশা প্রতিরোধক ব্যবহার ও ডেঙ্গুর উপসর্গ সম্পর্কে সচেতন থাকলেই এই প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব। মনে রাখবেন, প্রতিরোধই ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ খবর

স্বাস্থ্য - এর সব খবর



রে