ঢাকা, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

ঢাকা দুই সিটিকে এক করার প্রস্তাব

২০২৫ এপ্রিল ২৩ ১১:২২:১৪
ঢাকা দুই সিটিকে এক করার প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন—উত্তর ও দক্ষিণ—২০১২ সালে আলাদা দুটি করপোরেশন হিসেবে কার্যক্রম শুরু করলেও, এখন এই বিভাজন তুলে দেওয়া প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। কমিশন ঢাকার পুরো মহানগরীজুড়ে একটি একক সিটি করপোরেশন গঠনের পরামর্শ দিয়েছে এবং এর কাঠামো, কাজের পরিধি ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে বলেছে। কমিশনের মতে, সিটি করপোরেশন মূলত সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে, তবে স্থানীয় পরিষেবাগুলোর জন্য ‘সিটি কাউন্সিল’ গঠন করা হবে, যা প্রতিটি অঞ্চলের কাজগুলো পরিচালনা করবে।

কমিশন সিটির অভ্যন্তরে বর্তমান ২০টি অঞ্চলের জন্য পৃথক সিটি কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিটি সিটি কাউন্সিল একটি নির্দিষ্ট এলাকার কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং এখানকার মেয়র ও কাউন্সিলররা স্থানীয় পরিষেবা যেমন—প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, কমিউনিটি পুলিশিং, মশকনিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাস্তা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি পরিচালনা করবেন। সিটি কাউন্সিলের সদস্যরা নির্বাচিত হবেন সরাসরি ভোটের মাধ্যমে, তবে সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন হবে কাউন্সিলরদের ভোটে।

মেয়র নির্বাচনে জনগণের সরাসরি ভোটের অধিকার খর্ব হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবীর। তিনি জানান, সিটি করপোরেশনগুলোর মেয়র যদি ভবিষ্যতে কেবল কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন, তাহলে নাগরিকদের সরাসরি ভোটাধিকার অনেকাংশে ক্ষুণ্ন হবে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

ঢাকা শহরের পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৪ সালে, এবং ১৯৯০ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন হিসেবে নামকরণ করা হয়। ২০১১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন বিলুপ্ত করা হয়, এবং পরবর্তী বছর ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দুটি আলাদা সিটি করপোরেশন—ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ—অবস্থান করে। এখন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন লন্ডনের নগর সরকার কাঠামোর আদলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য একটি দুটি স্তরের ‘মহানগর সরকার’ গঠনের সুপারিশ করেছে, যা ঢাকায় প্রবর্তন হলে নতুন ব্যবস্থার মধ্যে বিভিন্ন সিটি কাউন্সিলের আওতায় প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদান করা হবে।

কমিশন অনুযায়ী, প্রত্যেক সিটি কাউন্সিলে ৯ থেকে ১৫টি ওয়ার্ড থাকবে এবং এক্ষেত্রে নারী কাউন্সিলরদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। কাউন্সিলররা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন, এবং তাদের ভোটে কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচিত হবে। সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের জন্য মেয়র পদে নির্বাচন উন্মুক্ত থাকবে, যার জন্য কাউন্সিলরদের এবং বাইরের ব্যক্তিরাও প্রার্থী হতে পারবেন।

কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরের ২০টি অঞ্চল নিয়ে সিটি কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে। যেমন, বনানী-বারিধারা-গুলশান, উত্তরা পূর্ব-পশ্চিম, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, লালবাগ, কেরানীগঞ্জ, রামপুরা-খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, রমনা-মতিঝিল, গাবতলী-আমিনবাজার, বসুন্ধরা-ভাটারা, কাফরুল-ক্যান্টনমেন্ট, সাতারকুল, ডেমরা, তেজগাঁও-আগারগাঁও সংসদ ভবন এলাকা ইত্যাদি। এসব অঞ্চলে নতুনভাবে সিটি কাউন্সিল গঠন করে, স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য আরও সুষ্ঠু ও দক্ষ পরিষেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবীর বলেন, দুটি সিটি করপোরেশন থাকা নাগরিক সেবার মান উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে। তবে, সিটি করপোরেশনগুলোর জন্য একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামো নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে সেগুলো স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, যদি মেয়র নির্বাচনের প্রক্রিয়া জনগণের সরাসরি ভোটে না হয়, তবে তা গণতান্ত্রিক চর্চা ও মানুষের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ন করবে, যা এক ধরনের বিপর্যয় হতে পারে।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ঢাকায় স্থানীয় পরিষেবার নতুন এক যুগের সূচনা হতে পারে, তবে এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, নাগরিকের ভোটাধিকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকরী কাঠামোর জন্য কতটা উপযোগী হবে, তা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও আলোচনা প্রয়োজন।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে