ঢাকা, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

৩৯৫ কোটি টাকা মার্জিন ঋণ: ২৭৫ বিনিয়োগকারীর ভবিষ্যত ও শেয়ারবাজারের সংকট

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১১ ০৯:৫১:০৪
৩৯৫ কোটি টাকা মার্জিন ঋণ: ২৭৫ বিনিয়োগকারীর ভবিষ্যত ও শেয়ারবাজারের সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক : জিএসপি ইনভেস্টমেন্ট একটি মার্চেন্ট ব্যাংক, যা মূলত শেয়ারবাজারে মার্জিন ঋণ সরবরাহ করে। মার্জিন ঋণ এমন ঋণ, যা বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয়ের জন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ধার নেন। তবে, এখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জিএসপি ইনভেস্টমেন্টে মার্জিন ঋণ দেওয়া হয়েছিল আইনবর্হিভূতভাবে, অর্থাৎ তারা সঠিক নিয়ম অনুসরণ করেনি।

এমতাবস্থায়, ২৭৫ জন বিনিয়োগকারীকে প্রায় ৩৯৫ কোটি ৬ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল, যা এখন ফেরত নেওয়া সম্ভব নয়। এর প্রধান কারণ হলো, ঋণগ্রহীতা বিনিয়োগকারীদের সিকিউরিটিজের (শেয়ার বা বন্ড) মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। এই কারণে, ঋণ ফেরতের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব নয়।

মার্জিন ঋণ দেওয়া হয় শেয়ার ক্রয়ের জন্য, কিন্তু শেয়ার বাজারে মূল্য পতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বা সিকিউরিটিজের মূল্য এখন ঋণের পরিমাণের তুলনায় অনেক কম। এতে তাদের ইক্যুইটি (পুঁজির অংশ) ঋণাত্মক হয়ে গেছে, অর্থাৎ শেয়ার মূল্য ঋণের পরিমাণের চেয়ে কম হওয়ায় এই বিনিয়োগকারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

এখন পর্যন্ত জিএসপি ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির সঞ্চিতি গঠনে যথেষ্ট অর্থ জমা হয়নি। সঞ্চিতি গঠন করা হয় ক্ষতির জন্য প্রস্তুতি হিসেবে, যাতে ভবিষ্যতে ঋণ বা আর্থিক ক্ষতি হলে তা পূরণ করা যায়।

কোম্পানির সঞ্চিতি গঠনের প্রয়োজন ছিল ৩৬১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, কিন্তু তারা মাত্র ৬০ কোটি ১ লাখ টাকা সঞ্চয় করতে পেরেছে। ঋণ খেলাপি হওয়া পরিস্থিতি কোম্পানির ৪৭৭ কোটি ৭২ লাখ টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে সঞ্চিতি গঠনের প্রয়োজন ছিল ৪৬৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, কিন্তু কোম্পানি ২৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা সঞ্চয় করেছে। এর ফলে সঞ্চিতি ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২২৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

জিএসপি ইনভেস্টমেন্টের মূলধন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন দুটি প্রতিষ্ঠান—প্রিমিয়ার লিজিং এবং ফাস ফাইন্যান্সে বিনিয়োগ করার কারণে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং তাদের অস্তিত্ব সংকটপূর্ণ।

টিডিআর প্রতিষ্ঠান দুটি ঋণ নিয়েছে, এবং তারা আদালতের মাধ্যমে পরিশোধ করার নির্দেশ পেয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব সংকটে পড়ে সেগুলি পরিশোধ করতে পারবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়।

জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি ২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়, এবং এর পরিশোধিত মূলধন ছিল ১৫৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। তবে, এর মধ্যে ৭৭.৫৬% শেয়ার মালিকানা বিভিন্ন শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে, যার মধ্যে উদ্যোক্তা বা পরিচালকের শেয়ার নেই।

এদিকে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি, কোম্পানিটির শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬.২০ টাকা, যা একটি উল্লেখযোগ্য পতন। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে এবং শেয়ারবাজারে এই কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতি অনেক শেয়ারবাজারের প্রতিষ্ঠানের জন্য মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে এবং কোম্পানির ঋণ পরিশোধের সম্ভাবনা কমে গেছে। সামগ্রিকভাবে, এটি একটি বড় আর্থিক সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে, এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

এই ধরনের অবৈধ এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি শেয়ারবাজারের জন্য এক বড় বিপদের কারণ হতে পারে, এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ারবাজারে নিরাপদ বিনিয়োগের উপযুক্ত পরামর্শ প্রদান অত্যন্ত জরুরি।

জাহান/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে