ঢাকা, সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

ফাইন ফুডসের শেয়ার কারসাজি: কৃত্রিম মুনাফার ফাঁদে বিনিয়োগকারীরা

২০২৫ জানুয়ারি ২০ ১০:২৯:৪৩
ফাইন ফুডসের শেয়ার কারসাজি: কৃত্রিম মুনাফার ফাঁদে বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ফাইন ফুডসের শেয়ার কারসাজি ও কৃত্রিম মুনাফা নিয়ে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যা কোম্পানির আর্থিক হিসাব এবং শেয়ারবাজারে তার কর্মকাণ্ডের উপর সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনার বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হলো:

ফাইন ফুডসের শেয়ারদরের উচ্চতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ কোম্পানির ব্যবসায়িক পারফরম্যান্স তেমন ভালো না হলেও শেয়ার দর আকাশচুম্বি হয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে যে, কোম্পানির কর্তৃপক্ষ শেয়ার দরের বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিমভাবে আর্থিক হিসাব তৈরি করছে, যাতে ব্যয় কম এবং মুনাফা বেশি দেখানো হয়।

মুনাফা বৃদ্ধির দাবি: ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানির শেয়ার প্রতি মুনাফা ১.৮১ টাকা দেখানো হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ০.৩৮ টাকা। এতে মুনাফা ৩৭৬% বৃদ্ধি পাওয়ার দাবি করা হয়েছে।

কৃত্রিম হিসাব: এসব মুনাফা বৃদ্ধির পেছনে কৃত্রিম আর্থিক হিসাব এবং হিসাব নিরীক্ষায় অবৈধ প্রক্রিয়া থাকতে পারে, যেহেতু নিরীক্ষক মুনাফার হিসাবের সঠিকতা যাচাই করতে পারেননি।

কোম্পানির আর্থিক হিসাবের অসঙ্গতি:কোম্পানির আর্থিক হিসাব এবং নিরীক্ষায় বেশ কিছু গুরুতর অসঙ্গতি ধরা পড়েছে, যা শেয়ার কারসাজি এবং মিথ্যা তথ্য প্রদানের দিকে ইঙ্গিত করছে: নগদ লেনদেনের গরমিল: কোম্পানিটি ৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা আয়, ৯১ লাখ টাকা বাকিতে বিক্রি, এবং ৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা কাঁচামাল ক্রয় দেখানোর পরও এ সব লেনদেন নগদে করা হয়েছে বলে দাবি করেছে। তবে, এসব লেনদেনের সত্যতা যাচাই করতে পারেননি নিরীক্ষক।

মজুদ পণ্যের অপূর্ণ নিরীক্ষা: কোম্পানির ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকার মজুদ পণ্যের মধ্যে ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা ফিঙ্গারলিঙ্ক এবং ১ কোটি ৬ লাখ টাকা কাঁচামাল ছিল, কিন্তু নিরীক্ষক মজুদ পণ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেননি। এর মানে হতে পারে যে, এই মজুদ পণ্যের হিসাব ভুল অথবা মিথ্যা হতে পারে।

স্থায়ী সম্পদের অস্তিত্ব: কোম্পানির স্থায়ী সম্পদের অস্তিত্ব যাচাইয়ে তালিকা বা রেজিস্টার না পাওয়ায়, নিরীক্ষক নিশ্চিত হতে পারেননি যে, এই সম্পদের প্রকৃত অস্তিত্ব রয়েছে।

কোম্পানির কর্তৃপক্ষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ব্যবসায় মুনাফার চেয়ে বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে (শেয়ার প্রতি ৮৮ পয়সা মুনাফা হলে ১ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা)। এটি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার চেষ্টা ছিল। তবে, এর সাথে মুনাফার অতিরঞ্জিত হিসাব যোগ করা হয়েছে, যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিপদে পড়ে।

কোম্পানির শেয়ারদরের অতিরিক্ত বৃদ্ধির পেছনে কৃত্রিম মুনাফা এবং কারসাজি থাকার কারণে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত। কিছু ব্রোকারেজ হাউজে এটি নিয়ে আলোচনা চলছে যে, কোম্পানি শেয়ার পার্কিং বা সাধারন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটা ফাঁদ তৈরি করছে। বিনিয়োগকারীরা এই ফাঁদ বুঝতে পারায়, শেয়ার দরে সাম্প্রতিক পতন ঘটেছে। শেয়ারটির দাম ২০০ টাকার উপরে উঠলেও, এখন তা ১৯৪.৮০ টাকায় নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ ধরনের অনিয়মের বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। বিএসইসি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, অর্থবছরের শেষে নিরীক্ষক প্রতিবেদনসহ তালিকাভুক্ত কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা হয়। বিএসইসি যদি কোনো অনিয়ম বা অসঙ্গতি দেখতে পায়, তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ফাইন ফুডস ২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এবং বর্তমানে এর পরিশোধিত মূলধন ১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৮৪.৭৫% শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। তবে, কোম্পানির শেয়ারদরের অস্বাভাবিক উত্থান এবং মুনাফার অতিরঞ্জিত হিসাব শেয়ারবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

ফাইন ফুডসের শেয়ার কারসাজি ও কৃত্রিম মুনাফা একটি গুরুতর সমস্যা, যা শেয়ারবাজারের স্বচ্ছতা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। বিএসইসি এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উচিত যথাযথ তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে বাজারে স্বচ্ছতা বজায় থাকে।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে