ঢাকা, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
Sharenews24

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে যেসব দাবি জানাল বিএনপি

২০২৪ অক্টোবর ০৫ ২৩:০৭:৫৭
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে যেসব দাবি জানাল বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। দলটি নির্বাচনী রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

আজ শনিবার দুপুর আড়াইটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা করেছে।

বৈঠক শেষে যমুনায় অপেক্ষারত সাংবাদিকদের বিএনপি মহাসচিব বলেন, অত্যন্ত ভালো পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনায় প্রধান যে বিষয়গুলো আমরা আলোচনা করেছি- আমরা নির্বাচন সম্পর্কিত কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার, নির্বাচন কমিশন সংস্কার- সব কিছুই আমরা তুলে ধরেছি।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা বলেছি যে, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন স্থগিত করে, প্রধান রাজনৈতিকদলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আমরা একটা রোডম্যাপ দিতে বলেছি- নির্বাচন কমিশন, কবে নির্বাচন হবে সে বিষয়ে একটা রোডম্যাপ দিতে বলেছি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা এনআইডি কার্ড, যেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষণ করার যে আইন করা হয়েছি সেটাকে অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে বাতিল করতে বলেছি। বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যেন নির্বাচন সংস্কার কমিটিতে না যায়, সে কথা আমরা বলেছি।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা বলেছি যে ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় সাজানো, ভুয়া ভোটের মাধ্যমে গঠিত সব ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) বাতিল করতে বলেছি। ১৪, ১৮, ২৪ সালে যেসব নির্বাচন কমিশনার, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ তাদেরকে ভুয়া নির্বাচন, ব্যর্থ নির্বাচন, পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন করার অভিযোগে আইনের আওতায় আনতে বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘বিচারপতি খায়রুল হক- আমরা মনে করি নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করার পেছনে যিনি মূলহোতা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের মূল নায়ক, তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছি রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আগামী ৮ তারিখে অন্তবর্তী সরকারের দুই মাস হবে, এখন পর্যন্ত গত সরকারের আমলে অর্থাৎ ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যারা তাদের দোসর হয়ে কাজ করেছে, যারা তাদের সহায়তা করেছে, এই অনাচার, লুটপাট, মানুষের ওপর নির্যাতন, এই গণহত্যার ব্যাপারে সহায়ত করেছে তাদের অধিকাংশই এখনো তাদের স্ব স্ব পদে বহাল তবিয়তে বসে আছেন। অবিলম্বে তাদেরকে সরিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের এখানে আনার কথা আমরা বলেছি।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জেলা প্রশাসকদের ব্যাপারে আপনারা দেখেছেন যে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে, সেই ৫৯ জেলা প্রশাসকদের কী করে তাদের নিয়োগ করা হলো সে সম্পর্কে আমরা জানতে চেয়েছি। একইসঙ্গে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের নিয়োগ বাতিল করতে বলেছি। আমরা চুক্তিভিত্তিক কিছু নিয়োগ বাতিল করার কথা বলেছি। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যেও অন্তর্বতী সরকার ও গণঅভ্যুত্থানের যে মূল স্পিরিট সেটাকে ব্যাহত করছে- তাদেরকে সরানোর কথা বলেছি। আমরা যারা পদবঞ্চিত হয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা, ১৫ বছর ধরে তাদেরকে উপযুক্ত পদোন্নতির কথা উপদেষ্টা পরিষদকে বলেছি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিচার বিভাগের ব্যাপারে আমরা যেটা পরিস্কার করে বলেছি, সেটা হচ্ছে যে বিচার বিভাগের হাইকোর্ট বিভাগ- যেটা এখন পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং হাইকোর্ট বিভাগের বেশির ভাগ নিয়োগই হয়েছিল কিন্তু দলীয় বিবেচনায়। ৩০ জন বিচারপতি তারা বহাল তবিয়তে কাজ করছেন এখনো। এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আমরা বলেছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা ২০০৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত, আওয়ামী লীগের আমলে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা, গায়েবি, ভুয়া, সাজানো, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘কিছু আমলা, কিছু পুলিশ কর্মকর্তা- শুনতে পাই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের লোকজনরা এবং মন্ত্রীরা, তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। কীভাবে পালাচ্ছেন, কার সহযোগিতায় পালাচ্ছেন সে বিষয়গুলো আমরা দেখার জন্য বলেছি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আরেকটা বিষয় আমরা জোর দিয়ে বলেছি- আজকে পতিত, ফ্যাসিবাদী প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে আছেন, ভারতে থেকে তার মাধ্যমে, তাকে কেন্দ্র করে যে ধরনের প্রচারণা চলছে, যে অপপ্রচার চলছে সেই অবস্থা থেকে তাকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ভারত সরকারকে বলতে সরকারকে (অন্তর্বর্তী সরকার) বলেছি। তারা ভারত সরকারের সঙ্গে কথা বলবে। সেই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টির পায়তারা চলছে, সে বিষয়টিও আমরা বলেছে যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়টি আরও গভীরভাবে দেখে সেখানে কারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা কথা বলেছি।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গুম-খুনের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদেরকে খুব কম, একমাত্র জিয়াউল আহসান ছাড়া কাউকেই ধরা হয়নি। আমরা বলেছি যে তাদের সবাইকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। জাতিসংঘের একটি দল এসেছে এখানে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এইটার সঙ্গে যারা জড়িত আছেন তাদেরকে (প্রতিনিধিদল) সেভাবে সহযোগিতা করা হয়নি।’

বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে অংশ নেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও সালাউদ্দিন আহমেদ।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে