ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ঘুষ দিয়ে আইপিও বাগিয়ে নেওয়া এশিয়াটিকের ভূয়া জমি উন্নয়ন সম্পদ

২০২৩ ডিসেম্বর ৩১ ১৫:০৮:৩১
ঘুষ দিয়ে আইপিও বাগিয়ে নেওয়া এশিয়াটিকের ভূয়া জমি উন্নয়ন সম্পদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : অবাস্তব ভবন নির্মাণ ব্যয়ের মাধ্যমে ৪৫ কোটি টাকার ভূয়া সম্পদ দেখানো এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ কর্তৃপক্ষ জমি উন্নয়নবাবদও কৃত্রিম সম্পদ দেখিয়েছে। যারা নদীর মতো গর্ত মাটি ভরাটের মাধ্যমে জমি উন্নয়ন করেছে বলে সম্পদ দেখিয়েছে। এর মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস।

তবে এসব ভূয়া সম্পদ দেখিয়ে শেয়ারবাজারে আসার জন্য অবশ্য গুণতে হয়েছে কোটি কোটি টাকার ঘুষ। এছাড়া এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ও ইস্যু ম্যানেজার শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টকে ৪ কোটি টাকার আইওয়াশ জরিমানাতো আছেই।

এই জরিমানা করে কমিশন নিজেদেরকে নিরপেক্ষ এবং কোম্পানিটিকে পাপমুক্তির সাজা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। এরপর বিশেষ ব্যবস্থায় কোম্পানিটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় তারা।

প্রমাণিত অনিয়মের মধ্য দিয়ে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে এক ভিন্ন রূপ দেখায় কমিশন। এই ভিন্ন রূপে রূপান্তর করতে অবশ্য এশিয়াটিককে অনেক গচ্ছা দিতে হয়েছে বলে শোনা যায়। যা করার জন্য মাঠ প্রস্তুত করেছিলেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনির আহমেদ।

মনির আহমেদ যেভাবেই হোক কোম্পানিটিকে আইপিওতে টিকিয়ে রাখতে রাজি ছিলেন। যা কিছু প্রয়োজন, তাই করতে রাজি ছিলেন তিনি। এলক্ষ্যে তিনি বিএসইসির কমিশনার ও আইপিও বিভাগের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখাও করেন। তবে সৎ এই কমিশনারকে তিনি অবৈধ কাজে রাজি করাতে পারেননি। একইসময় অন্যদের সঙ্গেও মনির আহমেদ যোগাযোগ করেছিলেন। অবশ্য সেখানে সফলতাও পেয়েছেন তিনি।

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ছবি

ভবনের সঙ্গে সঙ্গে অকল্পনীয় মাটি ভরাটবাবদ জমি উন্নয়ননামক (ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) সম্পদ দেখিয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। যা দিয়ে নদীর সমান গর্ত ভরাট করা যাবে। সাধারনত বিভিন্ন কোম্পানি পরিশোধিত মূলধন ও পরিচালকদের শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানোর জন্য এই জমি উন্নয়ন ব্যয় বেশি দেখায়।

এশিয়াটিকের রেড হেরিং প্রসপেক্টাসের ৫৭ পৃষ্টানুযায়ি, এশিয়াটিক ল্যাবের জন্য ৬৬৮.৪০ শতাংশ বা (৬৬৮.৪*৪৩৫.৩০) ২৯০৭৫৪ বর্গফুট জমি কেনা হয়েছে। যার দাম দেখানো হয়েছে ৮৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এই মূল্যের জমিতে উন্নয়ন ব্যয় হিসাবে সম্পদ দেখানো হয়েছে ৩৬ কোটি ৮৬ লাখ ৩ হাজার ২৪ টাকা। যেখানে ১ শতক জমিতে উন্নয়ন ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫.৫১ লাখ টাকা।

কিন্তু গণপূর্ত অধিদপ্তরের ২০১৮ সালের দর অনুযায়ি, ওই ৩৬ কোটি ৮৬ লাখ ৩ হাজার ২৪ টাকা দিয়ে (৩৬৮৬০৩০২৪/৬২২) ৫ লাখ ৯২ হাজার ৬০৯ ঘনমিটার জমি মাটি ভরাট করা সম্ভব। এ হিসাবে এশিয়াটিকের জমির ৭২ ফুট গর্ত ভরাট করা হয়েছে। এই বিশাল গর্ত ভরাট মানে নদীর ভরাটের সমান।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ি, প্রতি ঘনমিটারে পরিবহনসহ সর্বোচ্চ ৬২২ টাকা ব্যয় হতে পারে। এ হিসেবে এশিয়াটিকে ৬৬৮.৪০ শতাংশ জমি ১ ফুট গর্ত বিবেচনায় (২৯০৭৫৪*০.০২৮৩১৬৮৫) ৮২৩৩.২৪ ঘনমিটার জমি রয়েছে। যেহেতু তাদের ৩৬ কোটি ৮৬ লাখ ৩ হাজার ২৪ টাকা ব্যয় হয়েছে, সে হিসাবে পুরো জমি গড়ে (৫৯২৬০৯/৮২৩৩.২৪) ৭২ ফুট গর্ত ভরাট করা হয়েছে।

সাধারনত কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জমির দলিল সাবমিট করানোর প্রয়োজন পড়ায় দর বাড়িয়ে দেখাতে পারে না। যে কারনে তারা উন্নয়ন ব্যয় বাড়িয়ে প্রতারনার সুযোগ নিয়ে থাকে। এটাকে কাজে লাগিয়ে পরিশোধিত মূলধন ও পরিচালকদের শেয়ার বেশি দেখানো হয়।

তারা ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টবাবদ এই বিশাল সম্পদ দেখালেও তার বিস্তারিত কোন তথ্য দিতে পারে নাই। ৫৯ পৃষ্টায় ৫১ পৃষ্টায় জমি উন্নয়ন ব্যয়ের বিস্তারিত চাওয়া হলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা দেয়নি। এশিয়াটিক কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র উন্নয়ন ব্যয়ের মোট পরিমাণ তুলে ধরেছে। কিন্তু এই টাকা কিভাবে ব্যয় হয়েছে, তার কোন তথ্য নেই।

চলবে.....

শেয়ারনিউজ, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে