ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জানুয়ারি ২০২৬
Sharenews24

রেকর্ড পতনে শেয়ারবাজার, আস্থা ফেরাতে বড় পরিবর্তনের তাগিদ

২০২৫ ডিসেম্বর ৩১ ২৩:৩৩:১২
রেকর্ড পতনে শেয়ারবাজার, আস্থা ফেরাতে বড় পরিবর্তনের তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো উন্নতির দিকে থাকলেও দেশের শেয়ারবাজার বর্তমানে এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। বাজার পুনরুদ্ধারের একটি অর্থবহ সুযোগ তৈরি হয়েছে, তবে গভীর ও সমন্বিত সংস্কার ছাড়া এই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ‘ভ্যানগার্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড’ তাদের সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সাল জুড়ে অর্থনীতির মৌলিক সূচকগুলো স্থিতিশীল হলেও শেয়ারবাজার তীব্র চাপের মুখে ছিল। ডিসেম্বরের শেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ের কাছাকাছি অবস্থান করছে। বর্তমানে বাজারের পিই রেশিও ৯ থেকে ১০ শতাংশের ঘরে, যা গত তিন বছরের গড় ১৪.৪ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। এটি কোম্পানির আয়ের ঘাটতি নয়, বরং বিনিয়োগকারীদের চরম আস্থাহীনতা ও ঝুঁকি নেওয়ার অনীহাকেই প্রতিফলিত করছে।

আঞ্চলিক তুলনায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পারফরম্যান্স অত্যন্ত হতাশাজনক। আইএমএফ-এর সংস্কারের পর পাকিস্তানের বাজার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, ঋণ পুনর্গঠনের পর শ্রীলঙ্কার সূচক ৪২ শতাংশ বেড়েছে এবং ভারতের বাজারও ভালো রিটার্ন দিয়েছে। অথচ বাংলাদেশে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে ৬৬ মিলিয়ন ডলারের নিট বিদেশি বিনিয়োগ বাজার থেকে বেরিয়ে গেছে, যা বাজারের গভীরতা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

দুর্বলতার মূল কারণসমূহ

ভ্যানগার্ডের মতে, গত ১৮ মাসে বাজারে কোনো নতুন আইপিও না আসা এবং তালিকাভুক্ত ৪০০টি কোম্পানির মধ্যে বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানির সংখ্যা মাত্র ২৫-৩০টিতে সীমাবদ্ধ থাকা বাজারের একটি বড় দুর্বলতা। এছাড়া ব্যাংক ঋণের সহজলভ্যতা এবং উচ্চ সুদের হার বিনিয়োগকারীদের ইক্যুইটি মার্কেট থেকে সরিয়ে ফিক্সড ইনকাম ইনস্ট্রুমেন্টের দিকে নিয়ে গেছে। এমনকি সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে চলে গেছেন।

উত্তরণের পথ ও সুপারিশ: বাজারকে এই বৃত্ত থেকে বের করে আনতে ভ্যানগার্ড একটি বিশদ রোডম্যাপ প্রস্তাব করেছে

• ট্যাক্স সুবিধা: তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর ব্যবধান বাড়ানো এবং ডিভিডেন্ডের ওপর কর ছাড় দেওয়া।

• দ্রুত আইপিও অনুমোদন: আইপিও অনুমোদনের দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনা এবং ভালো মানের কোম্পানিকে বাজারে আসতে উৎসাহিত করা।

• প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং স্টক এক্সচেঞ্জের সক্ষমতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো।

• মিউচুয়াল ফান্ড: দীর্ঘমেয়াদী তহবিল সংগ্রহের জন্য মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পকে শক্তিশালী করা, যা বর্তমানে মোট বাজার মূলধনের ৩ শতাংশেরও কম।

প্রতিবেদনে উপসংহারে বলা হয়েছে, যদি এই সংস্কারগুলো ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায় এবং একটি নির্বাচিত সরকারের অধীনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে, তবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার পুনরায় দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হতে পারবে।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে