ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জানুয়ারি ২০২৬
Sharenews24

কেঅ্যান্ডকিউ’র নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

২০২৫ ডিসেম্বর ৩১ ২৩:৪১:০৭
কেঅ্যান্ডকিউ’র নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কেঅ্যান্ডকিউ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ৩০ জুন ২০২৫ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে বড় ধরনের অসঙ্গতি ও অনিয়ম খুঁজে পেয়েছেন নিরীক্ষক। কোম্পানিটির সম্পদ যাচাইয়ে ব্যর্থতা, নথিপত্রের অভাব, সংবিধিবদ্ধ দায় পরিশোধ না করা এবং শেয়ারবাজারের নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস তাদের প্রতিবেদনে একটি 'কোয়ালিফাইড ওপিনিয়ন' বা আপত্তিমূলক মতামত প্রদান করেছে।

নিরীক্ষকের মতে, কোম্পানিটি ৫৪ কোটি ৬১ লাখ টাকার স্থাবর সম্পত্তি প্রদর্শন করলেও একটি যথাযথ সম্পদ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বা ফিক্সড অ্যাসেট রেজিস্টার না থাকায় এই বিশাল অঙ্কের সম্পদের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি, যা আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস) ১৬-এর পরিপন্থী।

কেএন্ডকিউ’র আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতার ঘাটতি এখানেই শেষ নয়; ভ্যাট জমা বাবদ ৪৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, বকেয়া খরচ বাবদ ১ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং শ্রমিক মুনাফা অংশগ্রহণ তহবিল বাবদ ৭৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকার কোনো পর্যাপ্ত নথিপত্র নিরীক্ষকের কাছে উপস্থাপন করতে পারেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে শ্রমিক তহবিলের মোট দায়ের মধ্যে ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকাই বিগত বছরগুলোর বকেয়া, যা এখনো পরিশোধ করা হয়নি।

শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, এই তহবিলের অর্থ শ্রমিকদের মাঝে সমানভাবে বণ্টন করার কথা এবং ব্যবসায়িক কাজে এই অর্থ ব্যবহার করলে ব্যাংক রেটের চেয়ে আড়াই শতাংশ বেশি হারে সুদ প্রদানের নিয়ম থাকলেও কোম্পানিটি তা পরিপালন করেনি।

এদিকে, কোম্পানিটির ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত তথ্যেও ভয়াবহ গরমিল ধরা পড়েছে। নিরীক্ষক জানিয়েছেন, ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত কোম্পানির নথিতে অবণ্টিত ডিভিডেন্ডের পরিমাণ ৩২ লাখ টাকা দেখানো হলেও ডিভিডেন্ডের জন্য নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা আছে মাত্র ১ হাজার টাকা। এই ৩১ লাখ ৯৯ হাজার টাকার ঘাটতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিস্টিং রেগুলেশন ২০১৫-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।

এছাড়া তিন বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে থাকা ২৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকার অবণ্টিত ডিভিডেন্ড ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) জমা দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোম্পানিটি তা পালন করেনি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের ‘এমফাসিস অব ম্যাটার’ অংশে নিরীক্ষক মাল্টি সোর্সিং লিমিটেডের সাথে কে অ্যান্ড কিউ-এর একীভূতকরণ বা মার্জার প্রক্রিয়ার বর্তমান অবস্থাও তুলে ধরেন। যদিও ২০২২ সালে উচ্চ আদালত এই মার্জার অনুমোদন করেছে এবং এর প্রভাব ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, তবে এখনো বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে লাইসেন্স ও ব্যবসার মালিকানা হস্তান্তরের প্রশাসনিক প্রক্রিয়াগুলো চলমান রয়েছে।

সব মিলিয়ে সম্পদের হিসাব থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী ও শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে কোম্পানিটির চরম অব্যবস্থাপনা ও আইন লঙ্ঘনের চিত্র এই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে