ঢাকা, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র পরিচালক করায় এনআরবি ব্যাংক বিব্রত

২০২৫ ডিসেম্বর ১২ ১৬:২৮:১০
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র পরিচালক করায় এনআরবি ব্যাংক বিব্রত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংক এমন একজন ব্যক্তিকে এনআরবি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে, যিনি পূর্বে ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ বাংলাদেশ (ইকাব) কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। গত মার্চ মাসে ব্যাংকটির বোর্ড পুনর্গঠনের সময় পেশাগত অসদাচরণের জন্য দুবার শাস্তিপ্রাপ্ত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এ কে এম মিজানুর রহমানকে ব্যাংকটির পরিচালক করা হয়। এখন তার বিরুদ্ধে অনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যায্য সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনআরবি ব্যাংকের সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পেশাগত অসদাচরণের জন্য ইকাব মিজানুর রহমানের ওপর একাধিক শাস্তি আরোপ করেছিল। এর মধ্যে জরিমানা, ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ডিভিএস) ব্যবহারে স্থগিতাদেশ এবং অস্থায়ীভাবে সদস্যপদ স্থগিত রাখা অন্তর্ভুক্ত। এরফলে, তার এই নিয়োগ এনআরবি ব্যাংককে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেছেন, "সরকার পরিবর্তনের পর অল্প সময়ের মধ্যে ১৪টি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছিল। একাধিক মহল থেকে নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। নিয়োগের আগে সমস্ত তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এখন অভিযোগ সামনে আসায় আমরা তদন্ত করছি এবং ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে অপসারণ করা হয়েছে। আমরা ব্যাংক থেকে পাওয়া স্বাক্ষরযুক্ত ও বেনামি উভয় ধরনের অভিযোগই যাচাই করছি।"

ব্যাংকের সূত্রগুলো জানায়, বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, পরিচালকরা সার্বক্ষণিক ব্যাংক-এর গাড়ি ব্যবহারের অধিকারী নন; তারা শুধুমাত্র বোর্ড বা অন্যান্য অফিসিয়াল সভায় যোগদানের জন্য গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। তবে, এনআরবি ব্যাংকের চারজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, মিজানুর রহমান সভার বাইরেও বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক-এর গাড়ি ব্যবহার করেছেন, কখনো কখনো একসঙ্গে দুটি গাড়িও ব্যবহার করেছেন।

এছাড়াও, তার বিরুদ্ধে কার্যনির্বাহী সিদ্ধান্তগুলোতে, বিশেষ করে কাজের আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। এই কার্যক্রম বোর্ড সদস্য এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু মিজানুর রহমানকে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োগ করেছে, তাই কর্মীরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে দ্বিধা করেন এবং তিনি এই সুযোগ "কাজে লাগাচ্ছেন।"

মূলত অনাবাসী বাংলাদেশিদের মালিকানায় চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এনআরবি ব্যাংক-এর দীর্ঘকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক ব্যবসায়ী এবং আল হারামাইন পারফিউমসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান। গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এবং আরও কয়েকজন পরিচালক বাংলাদেশে ফেরা বন্ধ করে দেন। এরফলে বাংলাদেশ ব্যাংক গত মার্চে বোর্ড বাতিল করে পুনর্গঠন করে। সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ এবং আরও ছয়জনকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, যেখানে ইকবাল আহমেদকে চেয়ারম্যান এবং এ কে এম মিজানুর রহমানকে অডিট কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়।

মিজানুর রহমান শফিক মিজান রহমান অ্যান্ড অগাস্টিন ফার্মের ম্যানেজিং পার্টনার। ২০২২ সালে ইকাব তার বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ পেয়েছিল। তদন্তে একাধিক লঙ্ঘন নিশ্চিত হয়: প্রয়োজনীয় নিরীক্ষা ডকুমেন্টেশন বজায় রাখতে ব্যর্থতা, নিরীক্ষা কাজের কাগজের অপর্যাপ্ততা, নিরীক্ষা পরিচালনার জন্য মানব সম্পদের অভাব, অযৌক্তিকভাবে কম ফিতে নিরীক্ষার কাজ গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় সময়সীমা বজায় না রেখে নিরীক্ষা পরিচালনা করা। এই তদন্তের পর, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইকাব তাকে তিরস্কার করে, দুই বছরের জন্য DVS সিস্টেমে তার প্রবেশাধিকার স্থগিত করে এবং ২ লাখ টাকা জরিমানা করে। এর আগেও, ২০১৯ সালে ফার্স্টলিড সিকিউরিটিজের নিরীক্ষা সংক্রান্ত পেশাগত অসদাচরণের জন্য ইকাব তার সদস্যপদ এক বছরের জন্য স্থগিত করেছিল। পরে তার সদস্যপদ পুনর্বহাল করা হয়।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে