ঢাকা, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

যেখানে মানুষের চেয়ে বিড়াল বেশি

২০২৫ অক্টোবর ১০ ১০:৫৬:১৭
যেখানে মানুষের চেয়ে বিড়াল বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্পেনের ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপগুলো সাধারণত অবকাশযাপন, রোদে গা ভেজানো আর উৎসবের জন্য বিখ্যাত। মায়োর্কা, মেনোরকা, ইবিজা কিংবা ফরমেন্তেরার নাম অনেকেরই জানা। কিন্তু এসব জনপ্রিয় দ্বীপের আড়ালে এক নিভৃত দ্বীপ রয়েছে— নুয়েভা টাবার্কা, যা পর্যটনের দাপট থেকে এখনও অনেকটাই সুরক্ষিত।

এই দ্বীপটির দৈর্ঘ্য মাত্র ১,৮০০ মিটার এবং প্রস্থ ৪০০ মিটার। স্থায়ীভাবে বসবাস করেন মাত্র প্রায় ৫০ জন। এটিই স্পেনের স্থায়ীভাবে জনবসতিপূর্ণ সবচেয়ে ছোট দ্বীপ। তবে আয়তনে ছোট হলেও ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এটি বেশ সমৃদ্ধ।

নুয়েভা টাবার্কার জন্ম: ইতিহাসের ছায়া

‘নুয়েভা’ শব্দের অর্থ ‘নতুন’। এ নামটির পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ১৬ শতকে ইতালির জেনোয়ার লোমেলিনি পরিবার তিউনিসিয়ার তাবার্কা দ্বীপে প্রবাল আহরণের অনুমতি পায়। ১৭৪১ সালে ওসমান শাসকের দখলে গেলে সেখানকার অনেক বাসিন্দা বন্দি হন। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ মুক্তি পেয়ে স্পেনে আশ্রয় নেন।

স্পেন সরকার এই শরণার্থীদের জন্য আলিকান্তের উপকূলের নির্জন দ্বীপ ‘ইয়া প্লানা’ বরাদ্দ দেয়, যা পরে পরিচিত হয় নুয়েভা টাবার্কা নামে।

সেই সময় দ্বীপটি পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়। সামরিক প্রকৌশলীরা সোজাসুজি রাস্তাঘাট, কেন্দ্রীয় চত্বর এবং প্রতিরক্ষা প্রাচীরসহ একটি শহর নির্মাণ করেন। এটি আজও দ্বীপে দৃশ্যমান।

এক দ্বীপ, দুই ইতিহাস

অন্যদিকে, কিছু তাবার্কীয় পরিবার আশ্রয় নেয় ইতালির সার্ডিনিয়ায়। সেখানে তারা গড়ে তোলে ‘কার্লোফোর্তে’ ও ‘কালাসেত্তা’ নামে দুটি বসতি। এদের উত্তরসূরিরা আজও 'তাবার্কিনো' নামের একটি নিজস্ব উপভাষায় কথা বলেন।

প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র্য

১৯৮৬ সালে নুয়েভা টাবার্কাকে স্পেনের প্রথম সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়। দ্বীপটির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল এখনও প্রাকৃতিক অবস্থায় রয়েছে। এখানে রয়েছে সমৃদ্ধ সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য।

বাকি অংশে রয়েছে রঙিন বাড়ি, পাথরের গলি, ছোট গেস্টহাউজ ও রেস্তোরাঁ।

মানুষ কম, বিড়াল বেশি!

গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন ৬,০০০–১০,০০০ পর্যটক দ্বীপে আসেন। কিন্তু শীতকালে দ্বীপটি প্রায় নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা মারিয়া দেল মার ভালেরা বলেন, “শীতকালে কেউ আসে না। গ্রীষ্মে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ৮০-৯০ শতাংশ।”

২০২৩ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, দ্বীপটিতে মানুষের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক বিড়াল বসবাস করে। সেপ্টেম্বরের এক দুপুরে দ্বীপজুড়ে রোদে পোহাতে থাকা বিড়ালদেরই বেশি দেখা যায়।

সমস্যাও আছে

নভেম্বর থেকে মার্চ মাসে দ্বীপে ফেরি পরিষেবা সীমিত হয়ে পড়ে। ফলে চিকিৎসা, শিক্ষাসহ জরুরি সেবায় ব্যাঘাত ঘটে। অনেক বাসিন্দাই বাধ্য হয়ে দ্বীপ ছেড়েছেন।

স্থানীয় উন্নয়ন সমিতির সভাপতি কারমেন মার্তি বলেন, “আমরা চাই, স্পেনের অন্য দ্বীপগুলোর মতো এখানকার মানুষও সরকারি সহায়তা ও সুবিধা পাক। ই-টিকিট ব্যবস্থা চালু করলে দর্শনার্থীর সংখ্যা নির্ধারণ ও জনসেবা সহজ হবে।”

ঐতিহ্য রক্ষায় নতুন উদ্যোগ

২০২৫ সালের মে মাসে আলিকান্তে শহর প্রশাসন নুয়েভা টাবার্কার ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য রক্ষায় নতুন আইন পাস করেছে। শহরের ঐতিহ্য বিষয়ক প্রধান হোসে ম্যানুয়েল পেরেজ বলেন, “আমরা ঐতিহাসিক এলাকা সংরক্ষণের পাশাপাশি পুরোনো দুর্গের ভবিষ্যৎ ব্যবহার নিয়েও কাজ করছি।”

দ্বীপের উত্তরে এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেই পুরোনো সামরিক দুর্গের টাওয়ার, বাতিঘর এবং ছোট একটি কবরস্থান।

নুয়েভা টাবার্কা: অন্য এক পৃথিবী

আলিকান্তের উঁচু ভবনগুলো দূর থেকে দৃশ্যমান হলেও, টাবার্কা দ্বীপ যেন এক আলাদা জগত। এখানে সময় যেন ধীর, জীবন যেন সহজ। আধুনিকতার স্পর্শে না ভেসে, দ্বীপটি এখনো ধরে রেখেছে মানুষের মাপে গড়া এক শান্ত জীবনের চিত্র।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে