ঢাকা, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

ভয়াবহ নির্যাতনের ভয়ংকর বর্ণনা দিলেন উপদেষ্টা

২০২৫ অক্টোবর ১০ ১০:৪৮:৫৮
ভয়াবহ নির্যাতনের ভয়ংকর বর্ণনা দিলেন উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ছাত্র আন্দোলনের সময় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ রাষ্ট্রপক্ষের ১৯ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তিনি এ বিষয়ে জবানবন্দি দেন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ তার সাক্ষ্য গ্রহণ করে।

আসিফ মাহমুদ জানান, আন্দোলনের সময় তাকে এবং অন্যান্য সমন্বয়কারীদের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয় আন্দোলন প্রত্যাহারের জন্য।

তার দাবি, তৎকালীন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ ও রমনা জোনের ডিসি হুমায়ুন কবীর তাদের হুমকি দেন— “সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে” তাদের আটক করা হয়েছে, আন্দোলন না থামালে হত্যা করা হবে।

আসিফ বলেন, ১৯ জুলাই রাতে সাদা পোশাকধারীরা তাকে গুলশান নিকেতন এলাকা থেকে তুলে নেয়। ডিবি পরিচয়ে আটক করে তাকে আন্দোলন প্রত্যাহারের ভিডিও বার্তা দিতে বলা হয়। রাজি না হওয়ায় অজ্ঞান করার জন্য ইনজেকশন পুশ করা হয়। পরে ২৪ জুলাই সকালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে তিনি বুঝতে পারেন, তাকে রাখা হয়েছিল ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ‘আয়নাঘর’ নামক একটি নিরাপত্তা কেন্দ্রে।

আসিফের ভাষ্যমতে, ১৪ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার “রাজাকারের নাতিপুতি” সংক্রান্ত বক্তব্যের পর আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উসকানিমূলক বক্তব্যের পর ছাত্রলীগ ও বহিরাগতদের হামলায় বহু শিক্ষার্থী আহত হন।

১৬ জুলাই রংপুর ও চট্টগ্রামে পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হন। ১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলাকালে পুলিশের গুলিতে ২৯ জন নিহত হওয়ারও দাবি করেন আসিফ।

৫ আগস্ট ঢাকার চানখারপুলে পুলিশের গুলিতে ছয়জন আন্দোলনকারী নিহত হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। তার ভাষায়, “আমি নিজ চোখে দুইজনকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যেতে দেখি। পরে শুনি, আনাস, ইসমামুল ও ইয়াকুবসহ ছয়জন মারা গেছে।”

আসিফ জানান, ২৬ থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে আন্দোলনের অন্যান্য শীর্ষ সমন্বয়ক—নাহিদ ইসলাম, আবু বাকের মজুমদার, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম এবং নুসরাত তাবাসসুম—কেও ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয় এবং একইভাবে চাপে রাখা হয়। তাদের পরিবারের মাধ্যমে গণমাধ্যমে "সুস্থ আছি" বলে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পুলিশের আট সাবেক কর্মকর্তা আসামি। তাদের মধ্যে চারজন পলাতক—হাবিবুর রহমান, সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ইমরুল। বাকিরা—আরশাদ হোসেন, সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও নাসিরুল ইসলাম—বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে হাজির আছেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং সহকারী প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামীম, ফারুক আহমদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান ও তারেক আবদুল্লাহ।আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন অভি, জিয়াউর রশিদ টিটো, আবুল হোসেন ও কুতুব উদ্দিন।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৬ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার পরবর্তী জবানবন্দির দিন ধার্য করেছে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে