ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ভারতকে পেয়ে পাকিস্তানকে ভুলে যাবে চীন!

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৪ ১৭:১৯:৫৩
ভারতকে পেয়ে পাকিস্তানকে ভুলে যাবে চীন!

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)–এর ২০২৫ সালের শীর্ষ সম্মেলন ঘিরে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার কূটনীতিতে নতুন উত্তাপ ছড়িয়েছে। চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এক মঞ্চে আসায় আঞ্চলিক সম্পর্ক ও ভূ-রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ সৃষ্টি হয়েছে।

৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী শাসনব্যবস্থার সংস্কার, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং টেকসই উন্নয়ন—এই পাঁচটি মূল ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।

বিশ্ব অর্থনীতির পালাবদলে ভারত ও চীন বর্তমানে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই অবস্থায় মোদি ও শি জিনপিংয়ের সামনাসামনি বৈঠক বিশ্ব রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতীয় রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায় দিল্লি নতুন কূটনৈতিক কৌশলের দিকে ঝুঁকেছে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা মোদি-শির বৈঠকে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এটি আন্তর্জাতিক মহলে একটি কৌশলগত বার্তা: ভারত এখন বিকল্প পথ খুঁজছে।

তবে এই ঘনিষ্ঠতার ছায়ায় রয়ে গেছে একাধিক পুরনো ও অমীমাংসিত বিরোধ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

২১৬৭ মাইল দীর্ঘ সীমান্ত বিরোধ

গালওয়ান সংঘর্ষ (২০২০)

দালাই লামা ইস্যু ও তার উত্তরসূরি নির্বাচন

ব্রহ্মপুত্র নদে চীনের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প

১৯৬২ সালের যুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ক্ষত এখনও উন্মুক্ত। বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-চীন সম্পর্ক যতই কূটনৈতিকভাবে উষ্ণ হোক না কেন, বাস্তবিক আস্থার স্তরে পৌঁছাতে সময় লাগবে।

চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক এখন অনেক গভীরতর ও সুসংহত। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং কৌশলগত স্বার্থে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় টিকে আছে। তিয়ানজিনে শাহবাজ শরীফ স্পষ্ট করে বলেন, “চীন-পাকিস্তান বন্ধুত্ব ভবিষ্যতেও অবিচল থাকবে।” চীনের দৃষ্টিতে পাকিস্তান এখনো তার প্রথম সারির কৌশলগত অংশীদার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদি-শির ঘনিষ্ঠতার বার্তাটি মূলত কূটনৈতিক কৌশল। দিল্লি চাইছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেখাতে যে তারা আমেরিকার বিকল্প খুঁজছে। অপরদিকে চীন দেখাতে চায়, দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশকেই সে নিয়ন্ত্রণ করতে বা অন্তত পাশে রাখতে পারে।

তবে, দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব গড়ার সম্ভাবনা এখনও ক্ষীণ। কারণ, ভারত চীনকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখে এবং নিজেকে ভবিষ্যৎ বিশ্বশক্তি হিসেবে তৈরি করছে।

এই কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা পাকিস্তানের জন্য আপাতত হুমকি নয়। বরং সীমিত ভারত-চীন সংলাপ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা তৈরি করলে ইসলামাবাদ কূটনৈতিকভাবে উপকৃতও হতে পারে। চীন ও পাকিস্তানের সম্পর্কের গভীরতা ভারত-চীন সম্পর্কের সাম্প্রতিক উষ্ণতার চেয়ে অনেক দীর্ঘমেয়াদি ও বিশ্বাসভিত্তিক।

এসসিও সম্মেলনে মোদি, শি এবং শাহবাজের একই মঞ্চে উপস্থিতি একটি সাংকেতিক পরিবর্তনের বার্তা বয়ে এনেছে। তবে এই বার্তা বাস্তবে কতটা রূপ নেবে, সেটি নির্ভর করবে সীমান্ত বিরোধ, আন্তর্জাতিক চাপ এবং আঞ্চলিক ঘটনার পরবর্তী গতিপথের ওপর।

এই সম্মেলন দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের কূটনৈতিক স্বাতন্ত্র্য এবং চীনের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে ঘিরে নতুন করে আলোচনার দরজা খুলেছে। তবে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়, বরং একটি নতুন সমীকরণের সূচনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে মোদি-শি বৈঠককে।

কেএইচ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে