ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

চাপে ইসলামী ব্যাংক: মুডি’সের সতর্কবার্তা

২০২৫ আগস্ট ২৬ ০৯:৩১:২৫
চাপে ইসলামী ব্যাংক: মুডি’সের সতর্কবার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডি’স রেটিংস জানিয়েছে, বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপ এবং আর্থিক প্রতিবেদন সংক্রান্ত নিয়মকানুন তাদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করছে।

আস্থা সংকটে ইসলামী ব্যাংক

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা দুর্বল এবং সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে আমানতকারীদের আস্থা কমে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিকে সীমিত করতে পারে। তবে মুডি’স মনে করে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদে খাতটির প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করবে।

তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীলতা

মুডি’স বলছে, ইসলামী ব্যাংকগুলো তৈরি পোশাক খাতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। দেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি আসে এই খাত থেকে, যার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। নতুন শুল্ক নীতির কারণে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যা পুরো ভ্যালু চেইন ও রপ্তানির ওপর প্রভাব ফেলবে।

ঋণ পরিশোধে চাপ বাড়ছে

প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন বাজারে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুল্কের বোঝা বহন করতে হবে। এর ফলে ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধে সমস্যা দেখা দেবে। মজুরি এবং জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানিকারকদের আয় কমে গেছে, যা ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করছে।

সুশাসন ও নতুন নিয়মের প্রভাব

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সরবরাহ চেইনের সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে ইসলামী ব্যাংক খাত সুশাসনের সংকটে পড়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ শ্রেণিকরণে কঠোর নিয়ম কার্যকর হওয়ায় খেলাপি বিনিয়োগ দ্রুত বেড়ে গেছে। ২০২৫ সালের মার্চে এই অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৩৭ শতাংশে, যেখানে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তা ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। অন্যদিকে প্রচলিত ব্যাংকগুলোতে খেলাপির হার ছিল ২৫ শতাংশ।

ক্ষতি ও মুনাফায় চাপ

কিছু ইসলামী ব্যাংক ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই লোকসান দেখিয়েছে, যা তাদের চলমান সমস্যার প্রতিফলন। ২০২৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক হিসাবমান IFRS-9 কার্যকর হলে ঋণখেলাপিদের দ্রুত স্বীকৃতি বাধ্যতামূলক হবে। এতে শুরুতে ব্যাংকগুলোর মুনাফা আরও কমে যেতে পারে, যদিও দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত হবে।

আমানত হারাচ্ছে ইসলামী ব্যাংক

মুডি’স জানায়, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করলেও জনগণের আস্থা ফেরাতে সময় লাগবে। সেপ্টেম্বরের পর থেকে দুর্বল সুশাসনযুক্ত ব্যাংকগুলো আমানত হারাচ্ছে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহও কমেছে। এর ফলে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক খাতটিকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। মুডি’স আশা করছে, আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকগুলোর অর্থায়ন প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং সামগ্রিক ব্যাংক খাতে তাদের অংশীদারিত্ব ২৭ শতাংশের বেশি হবে।

তারল্য সহায়তার চিত্র

ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি বিশেষ স্কিম চালু করেছে—ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি (IBLF) এবং মুদারাবাহ লিকুইডিটি সাপোর্ট (MLS)। ২০২২-২৩ অর্থবছরে IBLF এর মাধ্যমে ৯৬ হাজার কোটি টাকা এবং MLS এর মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকা সরবরাহ করা হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে IBLF সহায়তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকায় এবং MLS সহায়তা বেড়ে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকায়। এই তারল্য সহায়তা বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৩.৮ শতাংশ বা ইসলামী ব্যাংকিং সম্পদের ২২ শতাংশ।

তোহা/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে