ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
Sharenews24

ব্যাংকে নেই, তবে ফুটপাতে মিলছে নতুন টাকার নোট

২০২৫ জুন ০৪ ১৬:৪৮:০৭
ব্যাংকে নেই, তবে ফুটপাতে মিলছে নতুন টাকার নোট

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদ উপলক্ষে সরকার নতুন টাকার নোট বাজারে ছাড়লেও রাজধানী ঢাকার শাখা ব্যাংকগুলো থেকে তা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের।

তবে আশ্চর্যজনকভাবে, খোলাবাজারে ঠিকই নতুন টাকার নোটের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ফড়িয়ারা, যেখানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এসব নোট। গত দুই দিনে ৭টি ব্যাংকের কমপক্ষে ১৪টি শাখায় এবং গুলিস্তান, সদরঘাট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিচে খোঁজ নিয়ে এই তথ্য জানা গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম ডিজাইন পরিবর্তন করে টাকা ছাপাল বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা অফিসের বাইরে আরও ১০টি ব্যাংকের মাধ্যমে এসব নতুন নোট সরবরাহ করার কথা ছিল। ব্যাংকগুলো হলো- সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, পূবালী, উত্তরা, ডাচ্-বাংলা, ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন জানিয়েছেন, এসব ব্যাংকের লোকাল অফিসকে নতুন টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে কোন ব্যাংক কোন শাখার মাধ্যমে নতুন টাকা বিতরণ করবে, তা নিজেরাই ঠিক করবে ব্যাংকগুলো।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। গতকাল মঙ্গলবার অগ্রণী ব্যাংক জাতীয় প্রেস ক্লাব শাখায় গিয়ে দেখা যায়, অনেক গ্রাহক নতুন টাকার জন্য ভিড় করছেন, কিন্তু টাকা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। শাখা ব্যবস্থাপক জাকিয়া পারভীন জানান, "গ্রাহকরা নতুন টাকা চাচ্ছেন অথচ আমরা এখনো পাইনি। কখন পাব তা-ও জানি না।" একই কথা বলেন রূপালী ব্যাংক পল্লবী শাখা ব্যবস্থাপক মো. রাজ্জাকুল হায়দার।

খোলাবাজারে নতুন টাকার রমরমা বাণিজ্যএদিকে সোম ও মঙ্গলবার গুলিস্তান কমপ্লেক্সের নিচে পুরোনো টাকার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ফড়িয়ারা নতুন এক হাজার, ৫০ ও ২০ টাকার নোটের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। হাঁকডাক করেই গ্রাহক টেনে নিয়ে বিক্রি করছেন নতুন টাকার নোট। শতকরা ১০ ভাগ বেশি নিয়ে বিক্রি হচ্ছে এসব টাকা।

সোমবার নতুন ৫০ ও ২০ টাকার নোট না পাওয়া গেলেও মঙ্গলবার থেকে পাওয়া যাচ্ছে, তবে পরিমাণে কম। ঈদ সালামিতে নতুন টাকা পেতে অনেকেই অগ্রিম দিয়ে ক্রয় করছেন নতুন ৫০ ও ২০ টাকার নোট।

ব্যাংক থেকে নতুন টাকা না পাওয়া এক গ্রাহক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "ব্যাংকে গিয়ে পাইনি। গুলিস্তানে পাব বিশ্বাস ছিল। তাই হলো। ব্যাংকে পেলাম না অথচ এখানে পাচ্ছি। সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ।" বাংলাদেশ ব্যাংকের নিচেও একই অবস্থা দেখা গেছে। তবে এসব টাকার হাটে এক হাজার টাকার নোটের চেয়ে ৫০ ও ২০ টাকার নোটের চাহিদা বেশি।

গুলিস্তানে নতুন টাকা বিক্রেতার কাছে জানতে চাওয়া হলে, নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, "আমরা টাকার জন্য যাই না, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা এসে দিয়ে যান। প্রতিযোগিতা বাড়ায় এবার গিয়ে নিয়ে এসেছি।" তিনি আরও বলেন, "আমরা কমিশন দিয়ে টাকা কিনি। এজন্য কিছু বেশি রেটে বিক্রি করতে হয়। এক হাজার টাকার একটা বান্ডিলে অতিরিক্ত দশ হাজার টাকা নেওয়া হয়। তবে ৫০ ও ২০ টাকার নোটের চাহিদা বেশি।"

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে নতুন টাকার নোট কোনো ফড়িয়ার হাতে যায়নি দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন বলেন, "বর্তমান সময়ে সে সুযোগ নেই। আমরা ১০টি ব্যাংকে নতুন নোট সরবরাহ করেছি। সেখান থেকে গ্রাহকরা টাকা তুলে বাইরে বিক্রি করতে পারে।"

নতুন টাকা না পাওয়ায় ঢাকার কোনো শাখা ব্যাংক তা গ্রাহকদের সরবরাহ করতে পারেনি—এমনটি জানালে আরিফ হোসেন বলেন, "একটি চক্র আছে যাদের কাজ এসব নতুন টাকা সংগ্রহ করে বাইরে বিক্রি করা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে এ ধরনের সুযোগ নেই।"

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, আগে রাজনৈতিক বিবেচনায় সিবিএ নেতারা নতুন টাকার নোট বাইরে বিক্রি করতেন। এখন কিছু অসৎ কর্মকর্তা ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী এসব করছেন।

মারুফ/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে