ঢাকা, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
Sharenews24

নাবিল গ্রুপের ব্যাংক জালিয়াতির ভয়ংকর চিত্র

২০২৫ মে ২০ ১০:১৬:০৮
নাবিল গ্রুপের ব্যাংক জালিয়াতির ভয়ংকর চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীভিত্তিক ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নাবিল গ্রুপের বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংক থেকে ৯ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা বেনামি ঋণ নেওয়া এবং তা ব্যবস্থাপনায় গুরুতর অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।

ইসলামী ব্যাংকের তদন্ত অনুযায়ী, নাবিল গ্রুপ তাদের ১৪ কর্মচারী ও সুবিধাভোগীদের নামে ৯টি কোম্পানি খুলে বিপুল অঙ্কের ঋণ গ্রহণ করে। এই কোম্পানিগুলোর অধিকাংশের নাম গ্রুপের নিজস্ব ওয়েবসাইটেও নেই। অভিযোগ রয়েছে, এসব ঋণের বিপরীতে সম্পূর্ণ বা পর্যাপ্ত জামানত ছিল না, এমনকি কোথাও আগে ঋণ দিয়ে পরে জামানত নেওয়া হয়েছে। এমনকি ঋণের অর্থ দিয়েই এফডিআর তৈরি করে তা জামানত হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

নাবিল গ্রুপের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাদের গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৫টি। নাবিল ট্রেডিং, এনজিআই ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, নাবিল ফিড মিলস, শিপুল এন্টারপ্রাইজ, আইএনএনএ অ্যাগ্রোটেক, নাবা ক্রপ কেয়ার, নাবিল অটো ফ্লাওয়ার মিলস, নাবিল অটো রাইস মিলস, নাবিল ডাল মিলস, নাবিল এডিবল অয়েল, ফুডেলা ব্র্যান্ডের ভোগ্যগণ্য, নাবিল ট্রান্সপোর্ট, নাবিল কোল্ড স্টোরেজ, রেজা কোল্ড স্টোরেজ ও অনুরা-জাহান বক্স ফাউন্ডেশন।

নাবিল গ্রুপ মূলত উত্তরাঞ্চলে ভোগ্যপণ্য সরবরাহের জন্য পরিচিত ছিল। বেশ আগে থেকে গ্রুপটি ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক হলেও হঠাৎ করে ঋণ বেড়েছে ২০২২ সালের মার্চের পর। ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী শাখায় নাবিল গ্রুপের নামে বর্তমানে ঋণ রয়েছে দুই হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। আর নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান জাহান বক্সের নামে নিবন্ধিত এ জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ঋণ আছে এক হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। ঋণটি বর্তমানে সাবস্ট্যান্ডার্ড ও সন্দেহজনক মানে শ্রেণীকৃত হয়ে আছে। নাবিল পরিবারের সদস্যদের নামে এখন ঋণ রয়েছে চার হাজার ৮০ কোটি টাকা।

২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী শাখায় নাবিল গ্রুপের মোট ঋণ ছিল দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ওই বছর শেষে এসে ইসলামী ব্যাংকের ঢাকা ও রাজশাহীর ছয়টি শাখায় বেনামিসহ ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহীর একটি আদালত গত ২৪ মার্চ গ্রুপ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম স্বপন, তাঁর স্ত্রী ও চারটি প্রতিষ্ঠানের ১৭৮ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, দুদক, এনবিআর ও সিআইডি যৌথভাবে বিষয়টি তদন্ত করছে।

তিনটি ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের একটি অংশ এস আলম গ্রুপের হিসাবে পৌঁছেছে এবং পরে বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এসব লেনদেনে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা বলেন, “যেহেতু কর্মচারীদের পক্ষে এমন ঋণ পাওয়া সম্ভব নয়, তাই এর দায় সংশ্লিষ্ট শক্তিধর ব্যক্তিদের ওপরই বর্তায়। বাংলাদেশ ব্যাংককেও এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দায় নিতে হবে।”

ইসলামী ব্যাংকের এমডি বলেন, “সিঙ্গেল বোরোয়ার এক্সপোজার লিমিট অতিক্রম করা হয়েছে। কে আসল সুবিধাভোগী, তা যাচাই করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নাবিল গ্রুপের এমডি আমিনুল ইসলাম স্বপনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি।

ব্যাংক খাতের এমন বড় অনিয়মের বিষয়টি দেশের আর্থিক শৃঙ্খলা ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তদন্তের পরিপূর্ণতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অর্থনীতিবিদরা আহ্বান জানাচ্ছেন।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে