ঢাকা, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারে চোখ রাঙানি, সূচক ঊর্ধ্বমুখী হলেই ভয়াবহ সেল প্রেসার

২০২৫ মে ২১ ১৫:২৮:২৬
শেয়ারবাজারে চোখ রাঙানি, সূচক ঊর্ধ্বমুখী হলেই ভয়াবহ সেল প্রেসার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দীর্ঘদিন যাবত ঘুরপাক খাচ্ছে এক অস্থিরতার ঘূর্ণিতে। একদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বাজার চাঙ্গা করতে, অন্যদিকে বাজার যেন বারবার সেই চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে নিচের দিকেই ধাবিত হচ্ছে।

সাম্প্রতিক বাজার চিত্র পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, দিনের শুরুতে সূচকে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি দেখা গেলেও দিন শেষে বিক্রির চাপ ও বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক বাজারকে ফের নেতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এই অবস্থায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাজারো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাজার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করলেই একশ্রেণির প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রভাবশালী বড় বিনিয়োগকারী ‘সেল প্রেসার’ তৈরি করছেন। এতে করে বাজারে কৃত্রিম চাপ সৃষ্টি হয় এবং নতুন করে আতঙ্ক শুরু হয় খুচরা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। এই চক্রাকার পরিস্থিতি দিনের শেষে বাজারকে পতনের দিকে ঠেলে দেয়।

আজ বুধবারও (২১ মে) বাজারে একই দৃশ্য চোখে পড়ে। লেনদেনের শুরুতে কয়েকবার বাজার বেশ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রূপ নেই। এক পর্যায়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৫ পয়েন্ট বেশি বেড়ে লেনদেন হয়। তারপর সেল প্রেসারে সূচক আগের দিনের সীমানায় ফিরে আসে। এমন দৃশ্য কয়েকবার দেখা যায়। শেষ বেলায় ডিএসইর সূচক কোন রকমে ৬ পয়েন্টের বেশি ঊর্ধ্বমুখী থাকে।

বাজার বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতে, বিএসইসি এককভাবে যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তার সবগুলো বাস্তবায়নযোগ্য বা বাজারবান্ধব হচ্ছে না। বিশেষ করে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স, কারসাজির অভিযোগে বড় আকারে শাস্তি, বোনাস-নগদ বন্টনের শর্ত, ঘন ঘন সার্কুলার ইত্যাদি বিষয়ে অনেক সময় স্টেকহোল্ডারদের মতামত উপেক্ষিত থাকে। এর ফলে বাজারে অনাস্থা তৈরি হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং বাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের (ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, ইস্যুয়ার কোম্পানি, বিনিয়োগকারী সংগঠন) — এদের মধ্যে নিবিড় সংলাপ ও সমন্বয় ছাড়া বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে না।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, অন্তবর্তী সরকারের শুরুতে থাকা ডিএসইএক্স সূচক ৬ হাজার ২০০ পয়েন্টের ঘর থেকে নেমে এসেছে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ পয়েন্টের ঘরে নেমে এসেছে। এতে বাজার মূলধন কমে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, বিনিয়োগকারীদের লোকসান বাড়ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনের লেনদেন নেমে এসেছে ৩০০ কোটি টাকার নিচে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে আস্থা ফেরাতে হলে সবচেয়ে আগে দরকার স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে নীতিনির্ধারণ, বিনিয়োগকারী স্বার্থে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, সততা ও দক্ষতা দিয়ে বাজার পরিচালনা, বড় বিনিয়োগকারীদের অস্বচ্ছ সেল প্রেসার মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ, মৌলভিত্তিক কোম্পানিকে প্রাধান্য দিয়ে আইপিও অনুমোদন এবং বাজারে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি প্রবাহ নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকে উৎসাহ প্রদান।শেয়ারবাজারে চোখ রাঙানি, সূচক ঊর্ধ্বমুখী হলেই ভয়াবহ ‘সেল প্রেসার’বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। এই বাজারের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও জনগণ উভয়ই লাভবান হতে পারে। তবে এর জন্য দরকার বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক বাজারব্যবস্থা। আর সেটিই এখন সময়ের দাবি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার সেতুবন্ধন গড়তে না পারলে শেয়ারবাজার বারবার এমন অনাস্থা ও দরপতনের চক্রেই ঘুরপাক খাবে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে